শিরোনাম

চাঁদাবাজির টাকায় মোটরসাইকেল কেনেন বহিষ্কৃত বাগছাস নেতা অপু

চাঁদাবাজির টাকায় মোটরসাইকেল কেনেন বহিষ্কৃত বাগছাস নেতা অপু

রাজধানীর গুলশানে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপু ওরফে কাজী গৌরব।

আজ রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জামশেদ আলমের কাছে তিনি ফৌজদার কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এর আগে, গত ৩০ জুলাই গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান (রিয়াদ) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওইদিন জবানবন্দি শেষে রিয়াদকে কারাগারে পাঠানো হয়। একই দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহীম হোসেন মুন্না, সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাবকে কারাগারে পাঠানো হয়।

জানে আলম অপুকে চার দিনের রিমান্ডে শেষে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পুলিশ পরিদর্শক মোখলেসুর রহমান রিয়াদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার আবেদন করেন।

গত ২৬ জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে শাম্মী আহমেদের বাসায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদার দাবি করতে গিয়ে হাতেনাতে গ্রেপ্তার হন পাঁচজন।

ওইদিন মধ্যরাতে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর। মামলায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।

‎মামলার এজাহারে সিদ্দিক আবু জাফর অভিযোগ করেন, গত ১৭ জুলাই সকালে মো. আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রিয়াদ এবং কাজী গৌরব ওরফে অপু তাঁকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে গুলশান ২ নম্বরের ৮৩ নম্বর রোডের বাসায় জোর করে ঢুকেন এবং তাঁর কাছে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার দাবি করেন। এতে তিনি ওই টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর হুমকি দিয়ে টাকা দিতে চাপ দিতে থাকেন।

একপর্যায়ে তিনি বাধ্য হয়ে নিজের কাছে থাকা নগদ পাঁচ লাখ টাকা এবং তাঁর ভাইয়ের কাছ থেকে আরও নগদ পাঁচ লাখ টাকা তাঁদের দুজনকে দেন। এই ঘটনার দুদিন পর ১৯ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে রিয়াদ ও অপু আবারও বাসায় গিয়ে তাঁর ফ্ল্যাটের দরজায় সজোরে ধাক্কা মারে। গুলশান থানা পুলিশকে ফোনে বিষয়টি জানালে তাঁরা সেখান থেকে চলে যায়।

‎এজাহারে আরও বলা হয়, এ ঘটনার পর গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মো. আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রিয়াদের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন তাঁর বাসার সামনে এসে তাঁকে খুঁজতে থাকে। তিনি বাসায় না থাকায় বাসার দারোয়ান মোবাইল ফোনে তাঁকে বিষয়টি জানায়। তাঁরা পুনরায় তাঁদের দাবি করা বাকি ৪০ লাখ টাকা দিতে বলে। টাকা না দিলে পুলিশে ধরিয়ে দেবে বলে হুমকি দিতে থাকে। বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করলে গুলশান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রিয়াদসহ পাঁচ জনকে আটক করে। তবে এ সময় অপু পালিয়ে যায়।

উল্লেখ্য, হাতেনাতে গ্রেপ্তার অন্যজন হলো আমিনুল ইসলাম (১৩)। আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশু বিধায় তাকে শিশু আদালতে নেওয়া হয়। তদন্ত কর্মকর্তা তাকে আটক রাখার আবেদন করেন। পরে তাকে টঙ্গী কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়।

এদিকে গত ১ জুলাই অপুকে গ্রেপ্তার করে ২ জুলাই আদালতে হাজির করলে আদালত চার দিন বিমান মঞ্জুর করেন। ঐদিন আদালতের কাছে অপু নিজেকে নির্দোষ দাবি করে রিয়াদের ওপর দোষ চাপান।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, অপু আদালতকে জানিয়েছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা রিয়াদ ও অপু নিজে মামলার বাদীর বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার দাবি করেন। এটা দেওয়া না হলে তারা পুলিশকে খবর দিয়ে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান। ভয়ভীতি দেখানোর একপর্যায়ে বাদী ১০ লাখ টাকা তাদের দেন। সেখান থেকে রিয়াদ ৫ লাখ টাকা রাখেন এবং অপু তিন লাখ টাকার বেশি নেন। বাকি টাকা অন্যান্যদের ভাগ করে দেন।

জানে আলম আরও স্বীকার করেছেন, চাঁদাবাজির টাকা দিয়ে তিনি মোটরসাইকেল কিনেছিলেন, যা পুলিশ উদ্ধার করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয়ে তাঁরা গুলশানে আরও কয়েকটি চাঁদাবাজি করেন।

তিনি গত ২৬ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টায় ঘটনাস্থলে ছিলেন। সেদিন তারা বাকি ৪০ লাখ টাকা আদায় করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ আসার আগেই টের পেয়ে তিনি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button