রাশিয়ার তেল চীনও কেনে, তবে ট্রাম্পের শুল্ক শুধু ভারতের ওপর কেন


রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য ভারতের ওপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে মোট শুল্কের হার ৫০ শতাংশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে একই সময়ে রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ তেল আমদানি করা সত্ত্বেও চীনকে এই শুল্কের আওতায় আনা হয়নি, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে চীনের নাম উল্লেখ করা হয়নি। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, চীন যদি রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রাখে তাহলে তাদের ওপর শুল্ক আরোপের জন্য আরও একটি নির্বাহী আদেশ জারি করা হবে কিনা, সে বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করা যাচ্ছে না। তবে এর পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে।
বাণিজ্য আলোচনা—যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বর্তমানে একটি ৯০ দিনের শুল্ক বিরতি চলছে, যা আগামী ১২ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা। এই সময়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা চলছে, যার ফলে চীনকে এখনই শুল্কের আওতায় আনা হয়নি।
সার্বভৌমত্বের যুক্তি—গত সপ্তাহে মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট চীনা কর্মকর্তাদের রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধের জন্য সতর্ক করেছিলেন। এর জবাবে চীন তাদের জ্বালানি সার্বভৌমত্বের কথা উল্লেখ করে জানায় যে তারা নিজেদের জাতীয় স্বার্থ অনুযায়ী তেল আমদানি করবে।
তাহলে ভারতের জন্য কেন ভিন্ন পরিস্থিতি? ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক ও ভোক্তা দেশ। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ভারত প্রতিদিন প্রায় ১.৭৫ মিলিয়ন ব্যারেল রুশ তেল আমদানি করেছে, যা তাদের মোট আমদানির প্রায় ৩৫ শতাংশ।
ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা একসময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি অনুকূল বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। তারা আশা করেছিলেন, তাদের পণ্যের ওপর শুল্ক ১৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে। কিন্তু রাজনৈতিক ভুল বিচার, ভুল বোঝাবুঝি ও সম্পর্কের তিক্ততা—এই তিনটি কারণে বিশ্বের বৃহত্তম ও পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে প্রায় ১৯০ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তিটি ভেস্তে গেছে। এ ছাড়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, যেমন—কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত না মানায় আলোচনা ব্যর্থ হয়। এর ফলে ভারত এখন অপ্রত্যাশিতভাবে উচ্চ শুল্কের মুখে পড়েছে।
এদিকে, ট্রাম্প এরই মধ্যে জাপান এবং ইইউর সঙ্গে বড় চুক্তি সই করেছেন, এমনকি ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সঙ্গেও আরও ভালো শর্তে বাণিজ্য চুক্তি করেছেন। এমতাবস্থায় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতের এই অচলাবস্থা কাটানোর জন্য ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ অপরিহার্য।