শিরোনাম
গাজায় আরও ৭৪ জনের প্রাণহানি, দৈনিক গড়ে ২৮ শিশুর মৃত্যুখরার পর স্বস্তির বৃষ্টি, আমন চাষিদের মুখে হাসিরাশিয়া এখন পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি মানতে বাধ্য নয়: মেদভেদেভইংল্যান্ড-ভারত ম্যাচের পুরস্কার বণ্টন নিয়ে আসল তথ্য ফাঁস‘হামরা খুনিদের বিচার চাহিশেখ পরিবারের সবাই চোর-ডাকাত: শামীম সাঈদীভারত-ইংল্যান্ড রোমাঞ্চকর টেস্ট দেখার সুযোগ থাকছে আবারওভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে চূড়ান্ত বৈঠক করল শশী থারুর নেতৃত্বাধীন সংসদীয় কমিটিসুরা ইয়াসিনে বর্ণিত ইন্তাকিয়া জনপদের বিস্ময়কর ঘটনামানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর গানে শুরু ‎জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির আয়োজন

গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার দিন হোক ৫ আগস্ট: তারেক রহমান

গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার দিন হোক ৫ আগস্ট: তারেক রহমান

আজ ৫ আগস্ট, ২০২৪ সালের এই দিনে ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান এবং বাংলাদেশের রাহুমুক্তির এক বছর পূর্তি। এই দিনটিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফ্যাসিবাদমুক্ত ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।

তারেক রহমান তাঁর বক্তব্যে ৫ আগস্টকে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণের জন্য আনন্দের ও বিজয়ের দিন হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই দিনে বাংলাদেশ রাহুমুক্ত হয়েছে এবং এটি এখন থেকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হবে।

তিনি বিগত দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী শাসনের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সেই সময়ে গুম, খুন, অপহরণ, হামলা-মামলা, নির্যাতন-নিপীড়ন ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। ‘আয়নাঘর’ নামের শত শত গোপন বন্দীখানায় মানুষকে আটকে রাখা হতো এবং অনেককে চিরতরে গায়েব করে দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে বিএনপির সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী ও কমিশনার চৌধুরী আলমের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।

তারেক রহমান বলেন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশনসহ সব সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে অকার্যকর করে ফেলা হয়েছিল। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছিল এবং দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকেও বিনষ্ট করার চক্রান্ত চলছিল। তিনি দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করা, ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করা এবং ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের বিষয়টিও তুলে ধরেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন বলেন, ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি পেতে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে রাজপথে নেমে এসেছিলেন। এই অভ্যুত্থানে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে, কোলের শিশুসহ দেড় হাজারের বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। তিনি এই গণ-অভ্যুত্থানকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করে সকল শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

তারেক রহমান শহীদদের প্রতি ঋণ পরিশোধের জন্য জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে একটি ইনসাফভিত্তিক গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ গঠনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি জনগণের সরাসরি ভোটে দায়বদ্ধ একটি রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন।

তিনি ফ্যাসিবাদী শাসনের সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তুলনা করার প্রচেষ্টার সমালোচনা করেন এবং ৫ আগস্টের ঘটনাকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, সেদিন গণভবন, সংসদ ভবন, আদালত, বায়তুল মোকাররম এবং মন্ত্রিসভা ছেড়ে সবাই পালিয়েছিল।

তারেক রহমান ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে আর কখনোই ফ্যাসিবাদ কায়েম হবে না, গণতন্ত্র হত্যা করার সুযোগ দেওয়া হবে না এবং বাংলাদেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে দেওয়া হবে না বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি এসব প্রশ্নে জাতীয় ঐক্য বজায় থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইস্যুভিত্তিক ভিন্নমতকে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য উল্লেখ করে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ বা চরমপন্থার উত্থান রোধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দল তাদের দলীয় কর্মসূচি নিয়ে জনগণের আদালতে যাবে এবং জনগণই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্থানীয় সরকার থেকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে জনগণের সরাসরি ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সরকারে জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, জনগণকে শক্তিশালী করতে না পারলে কোনো কিছুই শক্তিশালী ও টেকসই হবে না।

সবশেষে, তারেক রহমান দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়া, মব ভায়োলেন্সকে উৎসাহিত না করা, নারীর প্রতি সহিংস আচরণ না করা এবং অন্যের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানান। তিনি ‘মায়ের চোখে বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন, যেখানে দলমত, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ নিরাপদে থাকবে। তিনি আশা করেন, আজ এবং আগামীর প্রতিটি ‘৫ আগস্ট’ গণতন্ত্র, সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং মানবিক মানুষ হয়ে ওঠার অঙ্গীকারের দিন হয়ে উঠবে।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button