শিরোনাম

বছরের শুরুতেই রপ্তানিতে চমক

বছরের শুরুতেই রপ্তানিতে চমক

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাসেই দেশের রপ্তানিতে চমকপ্রদ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। জুলাই মাসে পণ্য রপ্তানি আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, মাসজুড়ে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪৭৭ কোটি ৫ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলারে, যা ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছিল ৩৮১ কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৯৫ কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার ডলার বা ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। ডলারপ্রতি বিনিময় হার গড়ে ১২১ টাকা ৯৬ পয়সা ধরে হিসাব করলে দেশীয় মুদ্রায় এই রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৫৮ হাজার ১৮২ কোটি টাকা।

কোন খাতে কত আয়

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধিতে গত জুলাই মাসে বড় অবদান রেখেছে তৈরি পোশাক খাত। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এককভাবে এ খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৯৬ কোটি ২৬ লাখ মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩১৭ কোটি ৮৪ লাখ ডলার।

এর মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২১৮ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের, যেখানে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। ওভেন পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৭৮ কোটি ৩৯ লাখ ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।

পোশাক খাতের পাশাপাশি অন্যান্য খাতেও রপ্তানি আয় বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে জুলাই মাসে আয় হয়েছে ১২ কোটি ৭৩ লাখ ডলার, যেখানে প্রবৃদ্ধি ২৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এর মধ্যে চামড়ার জুতা রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৮ কোটি ডলার, চামড়াজাত অন্যান্য পণ্য থেকে ৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলার এবং ক্রাশড লেদার থেকে এসেছে ৯ কোটি ২০ লাখ ডলার।

কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকেও এসেছে ইতিবাচক খবর। এ খাত থেকে আয় হয়েছে ৯ কোটি ৫ লাখ ডলার, যেখানে প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৮০ লাখ ৮০ হাজার ডলারে, প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ।

পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৫ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের, যা গত বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি। হিমায়িত ও জীবিত মাছ রপ্তানিও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে—জুলাই মাসে এ খাত থেকে আয় হয়েছে ৪ কোটি ১২ লাখ ডলার, যা ৪২ দশমিক ৭১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। শুধু চিংড়ি রপ্তানিই ৩ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেশি। ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ৫৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ, এ খাত থেকে আয় হয়েছে ২ কোটি ডলার।

কেন এই প্রবৃদ্ধি

নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, গত বছর রাজনৈতিক অস্থিরতা, ইন্টারনেট বিভ্রাট ও বন্দর কার্যক্রমে সমস্যা থাকায় জুলাইয়ে রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছিল। এবারের প্রবৃদ্ধি তারই তুলনামূলক প্রতিফলন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কসম্পর্কিত সময়সীমা (৩১ জুলাইয়ের মধ্যে পণ্য পাঠানোর বাধ্যবাধকতা) দ্রুত শিপমেন্টে উৎসাহ দিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিঃসন্দেহে রপ্তানিকারকদের মনোবল বাড়াবে। তবে এই ধারা ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button