শিরোনাম

ম্যানহোলে পড়া জ্যোতির নামে অনুদান চায় প্রতারকেরা, বন্ধের আহ্বান পরিবারের

ম্যানহোলে পড়া জ্যোতির নামে অনুদান চায় প্রতারকেরা, বন্ধের আহ্বান পরিবারের

গাজীপুরের টঙ্গীতে ঢাকনাবিহীন ম্যানহোলে পড়ে নিহত ফারিয়া তাসনিম জ্যোতির (৩২) নামে অনুদান সংগ্রহের নামে প্রতারণা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা অনুরোধ করেছেন, কেউ যেন এই নামে আর্থিক সহায়তা না দেন।

আজ রোববার এক বিবৃতিতে জ্যোতির পরিবার জানায়, জ্যোতির নামে অর্থ সংগ্রহকারীরা প্রতারক। তাঁরা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে শিশুদের ‘এতিম’ বলে সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছেন। কিন্তু জ্যোতির দুই ছেলে সুস্থ ও নিরাপদ আছে এবং পরিবার তাদের দেখভালে সম্পূর্ণ সক্ষম।

গত ২৭ জুলাই (রোববার) রাত সোয়া ৯টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকার ঢাকনা খোলা ম্যানহোলে পড়ে নিখোঁজ হন জ্যোতি। ওই দিন রাত থেকে গত মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত দফায় দফায় উদ্ধার অভিযান চালায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। অবশেষে ৩৬ ঘণ্টা পর গত মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে টঙ্গী এলাকার শালিকচূড়া (টেকপাড়া) বিল থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার হয়।

এ ঘটনা সারা দেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। এদিকে এই হৃদয়বিদারক ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণির প্রতারক চক্র অর্থ সহায়তার নামে প্রতারণা করছে বলে নজরে এসছে জ্যোতির পরিবারের। জ্যোতি চুয়াডাঙ্গা শহরের বাগানপাড়া এলাকার বাসিন্দা এবং পৌরসভার সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার মৃত বাবলুর মেয়ে। তিনি রাজধানীর মিরপুরে আট বছর বয়সী দুই জমজ ছেলে নিয়ে বসবাস করতেন এবং মনি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল হেলথ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

জ্যোতির বড় ভাই হাসানুজ্জামান লোটন বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, কিছু অসাধু ব্যক্তি ও চক্র এই দুঃখজনক ঘটনার সুযোগ নিয়ে সমাজে ভ্রান্ত তথ্য ছড়াচ্ছে। তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, দোকান ও জনবহুল স্থানে গিয়ে মানুষের সহানুভূতি আদায়ের নামে ভুয়া অনুদান সংগ্রহ করছে। তারা বলছে, এই মেয়েটির দুই সন্তান এতিম হয়ে গেছে, তাদের সাহায্য করুন। এই বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও প্রতারণা।

তিনি বলেন, ‘জ্যোতির আমরা দুই ভাই আছি। আমরা দুজনই আর্থিকভাবে সচ্ছল এবং সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। আমার বোন ২০১৮ সালে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ করেছিলেন। তখন জমজ ছেলে দুটার বয়স ছিল মাত্র এক বছর। এর পর থেকে একাই দুই সন্তানকে বড় করেছেন। বাচ্চাদের বয়স এখন আট বছর। আমার বোন উচ্চশিক্ষিত নারী ছিলেন। অনুগ্রহ করে কেউ প্ররোচিত হয়ে অর্থ দেবেন না। সিটি করপোরেশন ও কয়েকটি সংগঠন থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আমরা একই কথা আগেও বলেছিলাম। এমনকি গত ২৯ জুলাই যেদিন আমার বোনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়, সেদিনই অর্থ সহায়তা নেব না বলে সিটি করপোরেশনকে জানিয়ে আসি।’

বাচ্চাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে পরিবারের সদস্যদের সিদ্ধান্তের কথার বিষয়ে জ্যোতির বড় ভাই হাসানুজ্জামান লোটন আরও বলেন, ‘আমার দুই ভাগনে আমাদের কলিজার টুকো। এখন আমাদের বোন আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু আমরা চাই না তাঁর সন্তানেরা যেন বাবার ভালোবাসা থেকেও বঞ্চিত হয়। একজন সন্তানের কাছে মা-বাবা উভয়ের ভালোবাসাই সবচেয়ে মূল্যবান। তারা তাদের মাকে হারিয়েছে, বাচ্চা দুজন বাবাকেও হারিয়ে ফেলুক—এটা আমাদের পরিবার চায় না। আমরা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বাচ্চারা তাদের বাবার কাছে থাকবে। তাদের দাদি, বাবা ও মামারা সবাই মিলে সন্তানদের মানুষ করবে, ইনশা আল্লাহ।’

জ্যোতির ছোট ভাই আকরামুজ্জামান শোভন বলেন, ‘আমরা আমাদের বোনের কলিজার টুকরাকে ভালোবাসা দিয়ে বড় করে তুলব। তাদের মানুষের মতো মানুষ করতে আমরা দুই ভাই ও আমাদের সন্তানেরাও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমাদের বোন তাঁর দুই সন্তানকে প্রাণের থেকেও বেশি ভালোবাসতেন। মাহারা ওই শিশু দুটির দিকে তাকালে হৃদয় ফেটে যায়। আর যাই হোক, আমরা চাই শিশু দুটা তাদের বাবার স্নেহ যেন পায়। তবে আমাদের কোনো আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন নেই।’



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button