শিরোনাম

১৮৫ বছরের পুরোনো বুনো মহিষের শিং পাহাড়পুর জাদুঘরে হস্তান্তর

১৮৫ বছরের পুরোনো বুনো মহিষের শিং পাহাড়পুর জাদুঘরে হস্তান্তর

প্রায় ১৮৫ বছর আগে সিলেটের এক গভীর অরণ্যে শিকার করা হয়েছিল একটি দুর্লভ বুনো মহিষ। সেই মহিষের শিংসহ মাথার করোটি (শিংসহ মাথার খুলি) স্থান পেয়েছে নওগাঁর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর (সোমপুর) বৌদ্ধবিহার জাদুঘরে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নওগাঁ শহরের কালিতলা মহল্লার অধ্যাপক (অব.) মো. ফজলুল হক তাঁর পরিবারের প্রজন্ম ধরে সংরক্ষিত করা এটি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. ফজলুল করিম আরজুর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন।

অধ্যাপক (অব.) মো. ফজলুল হক জানান, নওগাঁর দুবলহাটীর রাজা রায় বাহাদুর হরনাথ রায় চৌধুরী সিলেটে জমিদারি ক্রয় করার পর তিনি তাঁর বিস্তৃত জমিদারি পরিদর্শন করার জন্য সিলেট যান। সেখানে তিনি অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে একটি বুনো মহিষ শিকার করেন। সিলেটে কিছু দিন থাকার পর তিনি দুবলহাটী রাজ প্রাসাদে ফিরে আসার সময় শিকার করা বিভিন্ন প্রাণীর মাথার করোটি সঙ্গে নিয়ে আসেন। সঙ্গে নিয়ে আসেন এই বুনো মহিষটির মাথার করোটিও।

প্রায় ১৮৫ বছর আগের বুনো মহিষের শিংসহ মাথার করোটি হস্তান্তর করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্রায় ১৮৫ বছর আগের বুনো মহিষের শিংসহ মাথার করোটি হস্তান্তর করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

তিনি আরও জানান, পরে ১৮৯১ সালে তিনি প্রয়াত হলে তাঁর স্থলে তাঁর পুত্র রাজা কৃঙ্করীনাথ রায় চৌধুরী জমিদারি প্রাপ্ত হন। দুবলহাটীর শিকারপুরের শৈলকোপা গ্রামের জোতদার সাকিম উদ্দীন শেখের সঙ্গে রাজা কৃঙ্করীনাথ রায় চৌধুরীর ঘনিষ্ঠতা ছিল। সেই ঘনিষ্ঠতার সুবাদে রাজা কৃঙ্করীনাথ রায় চৌধুরী ১৯৩৫ সালের দিকে এই বুনো মহিষের মাথার করোটি তাঁর ঘনিষ্ঠতম বাল্যবন্ধু সাকিম উদ্দীন শেখকে উপহারস্বরূপ দিয়েছিলেন।

জানা গেছে, সাকিম উদ্দীন শেখের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র আব্দুল গনি শেখ মহিষের মাথাটি সংরক্ষণ করছিলেন। আব্দুল গনি শেখের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র অধ্যাপক মো. ফজলুল হক মাথাটি তাঁর সংগ্রহে রেখেছিলেন। আজ তিনি নওগাঁ ঐতিহাসিক পাহাড়পুর জাদুঘরে সংরক্ষণের জন্য কাস্টোডিয়ান মো. ফজলুল করিম আরজুর নিকট করোটিটি হস্তান্তর করেন।

এদিকে ইতিহাস-ঐতিহ্যের এই নিদর্শন এখন পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার জাদুঘরের নতুন আকর্ষণ হতে যাচ্ছে। ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত এই স্থানে প্রতিদিন ভিড় করেন দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটক। তাঁদের সামনে শিগগির উন্মুক্ত করা হবে বাংলার শিকারের ইতিহাস ও প্রাণবৈচিত্র্যের এই দুষ্প্রাপ্য স্মারক।

জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. ফজলুল করিম আরজু বলেন, ‘এটি আমাদের জাদুঘরের জন্য একটি মূল্যবান সংযোজন। জমিদার আমলে শিকারের যে সংস্কৃতি ছিল, সেটির একটি চিহ্ন আজ আমরা হাতে পেলাম। করোটিটিকে কেমিক্যাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করে দীর্ঘ মেয়াদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এরপর দর্শনার্থীদের দেখার জন্য প্রদর্শনী অংশে স্থাপন করা হবে। এমন অনেক ঐতিহ্যবাহী বস্তু এখনো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে রয়েছে। এগুলো সংরক্ষিত জাদুঘরে এলে সাধারণ মানুষ অতীতকে আরও কাছ থেকে জানতে পারবে।’



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button