শিরোনাম

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানসহ ২৭ জনের নামে মামলা

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানসহ ২৭ জনের নামে মামলা

ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ১৫ কোটি টাকার ঋণ নিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রীসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

‘রিলায়েবল ট্রেডিং’ নামে একটি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) লিমিটেডের চট্টগ্রাম পোর্ট শাখা থেকে এই ঋণ অনুমোদন এবং পরবর্তী সময়ে ঋণের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। আজ বুধবার (৩০ জুলাই) মামলা করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইউসিবি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই ‘রিলায়েবল ট্রেডিং’ ভুয়া একটি প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক হিসাব খোলেন এবং সেখানে টাইম লোনের সুপারিশ করেন। ব্যাংকের চট্টগ্রাম পোর্ট শাখার কর্মকর্তারা মিথ্যা তথ্যসংবলিত পরিদর্শন প্রতিবেদন তৈরি করেন। পরবর্তী সময়ে শাখার ক্রেডিট কমিটি যাচাই ছাড়াই ঋণ অনুমোদনের সুপারিশ পাঠায় প্রধান কার্যালয়ে।

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঋণ প্রস্তাবটিতে ইউসিবির প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটি ৯টি নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ দেয়। তা সত্ত্বেও ঋণ প্রস্তাবটি ব্যাংকের ৪৫৪তম পরিচালনা পর্ষদ সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।

দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘রিলায়েবল ট্রেডিং’ নামে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মালিকানা ছিল সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর। তাঁর মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপের এক কর্মচারীর নামে কাগুজে মালিকানা তৈরি করে প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে পুরো ঋণের অর্থ ভুয়া অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তী সময়ে সেই টাকা আরামিট সিমেন্ট পিএলসি ও আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবে নিয়ে যাওয়া হয়।

মামলার আসামিরা হলেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, তাঁর স্ত্রী ও ইউসিবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমীলা জামান, ইউসিবি ব্যাংকের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বজল আহমেদ বাবুল, সাবেক পরিচালক আনিসুজ্জামান চৌধুরী, আখতার মতিন, বজল আহমেদ বাবুল, ইউনুছ আহমদ, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, আসিফুজ্জামান চৌধুরী, রোকসানা জামান চৌধুরী, বশির আহমেদ, আফরোজা জামান, সৈয়দ কামরুজ্জামান, মো. শাহ আলম, প্রফেসর ড. মো. জোনাইদ শফিক, ড. কনক কান্তি সেন, ড. অপরূপ চৌধুরী ও ব্যাংকটির সাবেক পরিচালক তৌহিদ সিপার রফিকজ্জামান।

এ ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন ব্যাংকের সাবেক অফিসার আবু হেনা মো. ফখরুল ইসলাম, সাবেক ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক ক্রেডিট অফিসার জিয়াউল করিম খান, সাবেক এফএভিপি ও ক্রেডিট ইনচার্জ, মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল, সাবেক এফএভিপি ও ম্যানেজার অপারেশন মীর মেসবাহ উদ্দীন হোসাইন, সাবেক ভিপি ও চট্টগ্রাম পোর্ট শাখার প্রধান আব্দুল হামিদ চৌধুরী, মডেল ট্রেডিংয়ের মালিক মোহাম্মদ মিছাবাহুল আলম, ইম্পেরিয়াল ট্রেডিংয়ের মালিক মো. আব্দুল আজিজ ও আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়ামের ডিজিএম শাহরিয়ার হোসেন।

নথিপত্র জাল, ঋণ জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৬/৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) (৩) ধারায় মামলা করা হয়েছে।

এর আগে, ২৪ জুলাই আরেক মামলায় ভিশন ট্রেডিং নামে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রীসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এ ছাড়া ১৭ এপ্রিল ২০ কোটি টাকার আরেকটি ভুয়া ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায়ও মামলা করা হয়।

দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ইতিমধ্যে সাইফুজ্জামান ও তাঁর স্ত্রীর নামে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া ৩৯টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার পাশাপাশি ১০২ কোটি টাকার শেয়ার এবং ৯৫৭ বিঘা জমি জব্দেরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button