গঙ্গাচড়ার আলদাদপুরে হামলার ঘটনায় ১৬ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি


রংপুরের গঙ্গাচড়ার আলদাদপুর ছয়আনি এলাকায় সনাতন ধর্মালম্বীদের বসতবাড়িতে হামলার ঘটনায় ১৬ লাখ টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গরু-ছাগল ও স্বর্ণালংকার লুট, বসতবাড়িতে ভাঙচুরে এ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইতিমধ্যে ভাঙচুর করা বাড়িঘর মেরামতে কাজ করছে প্রশাসন।
এ ঘটনায় করা মামলায় আদালতে দেওয়া পুলিশের প্রতিবেদনে ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি আলদাদপুর ছায়আনিপাড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের ১২টি বাড়িতে হামলা করে। সেখানে বসবাসকারী ২২টি পরিবারের নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, গরু-ছাগল, পানির পাম্পসহ প্রায় ১১ লাখ ১৬ হাজার ৭০০ টাকার জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া বসতবাড়ির দরজা-জানালায় ব্যাপক ভাঙচুর করায় প্রায় ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়।
হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার ছয়আনি গ্রামের ভুক্তভোগী রবীন্দ্রনাথ বাদী হয়ে গঙ্গাচড়া থানায় মামলা করেন। রাতেই নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে আজ বুধবার কারাগারে পাঠিয়েছে। তাঁদের রিমান্ড শুনানি হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত সব ঘরবাড়ি, ফার্নিচার আমরা মেরামত করে দিয়েছি। ২০টি মাটির চুলা, চারটি টিউবওয়েল স্থাপন করে দিয়েছি, শুকনো খাবার দিয়েছি। থালা-বাসন-প্লেট কিনে দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে পরিবারগুলোকে আরও সহায়তা করা হবে।’
পুলিশ জানায়, গত শনিবার (২৬ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মহানবী (সা.)-কে কটূক্তি করে আলদাদপুর ছয়আনি গ্রামের এক হিন্দু কিশোর পোস্ট দেয়। বিষয়টি ভাইরাল হলে স্থানীয় মুসলিম জনতার মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু তারপরেও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। প্রথমে একটি মিছিল কিশোরের বাড়ির সামনে অবস্থান নেয়। রাত ১০টার দিকে তার এক স্বজনের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।
পরদিন রোববার দুপুরে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা দিয়ে কিশোরকে আদালতের মাধ্যমে কিশোর পুনর্বাসনকেন্দ্রে পাঠানো হয়। এরপর ওই দিনই নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার সিংগেরগাড়ি পারেরহাট, বাংলাবাজার, মাগুড়া ও গঙ্গাচড়া থানা এলাকার খলেয়া, বেতগাড়ীসহ অন্যান্য এলাকার জনতা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কটূক্তিকারীর ফাঁসির দাবিতে মিছিল বের করে। শেষে হিন্দুপল্লির বাড়িঘরে ভাঙচুর চালানো হয়।