শিরোনাম

জনসংখ্যা বাড়াতে প্রত্যেক শিশুকে বছরে ৬২ হাজার টাকা করে দেবে চীন

জনসংখ্যা বাড়াতে প্রত্যেক শিশুকে বছরে ৬২ হাজার টাকা করে দেবে চীন

ক্রমাগত কমতে থাকা জন্মহারের প্রতিক্রিয়ায় দেশজুড়ে নতুন এক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে চীন। সরকার ঘোষণা দিয়েছে, তিন বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য প্রত্যেক পরিবারকে বছরে ৩ হাজার ৬০০ ইউয়ান (প্রায় ৬২ হাজার টাকা) করে যত্ন ভাতা দেওয়া হবে। এই পরিকল্পনা ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হলেও ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া শিশুরাও রাষ্ট্রীয় সহায়তা পাবে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া।

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এই ভাতা প্রায় ২ কোটি পরিবারের উপকারে আসবে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই ভাতাকে আয় হিসেবে বিবেচনা করা হবে না এবং এটি দারিদ্র্য সহায়তার যোগ্যতা নির্ধারণেও কোনো প্রভাব ফেলবে না।

চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে টানা তৃতীয় বছরের মতো দেশটির জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। মৃত্যুর হার জন্মহারকে ছাড়িয়ে যাওয়ায় দেশটির মোট জনসংখ্যা ১৩ লাখ ৯০ হাজার হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৪০ কোটি ৮০ লাখে। এর আগে ২০২৩ সালে এই হ্রাস ছিল ২০ লাখ ৮০ হাজার।

জনসংখ্যার এই পতনের মূল কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে দেশটিতে চালু থাকা ‘এক সন্তান নীতি’। ১৯৮০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এই নীতি অনুসরণ করেছে চীন। এ ছাড়াও বিগত বছরগুলোতে বিয়ের হারও কমে এসেছে। ২০২৪ সালে মাত্র ৬১ লাখ বিয়ের নিবন্ধন হয়েছে চীনে। অথচ ২০২৩ সালেও তা ছিল ৭৭ লাখ।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, জনসংখ্যা বাড়াতে সরকারের ঘোষিত শিশু যত্ন ভাতা প্রদান উদ্যোগের আগে দেশটির অন্তত ২০টি প্রদেশে স্থানীয়ভাবে শিশু ভাতা ও সহায়তা প্রকল্প চালু ছিল। যেমন—ইনার মঙ্গোলিয়ার রাজধানী হোহহটে তৃতীয় সন্তান দশ বছর না হওয়া পর্যন্ত বছরে ১০ হাজার ইউয়ান পর্যন্ত ভাতা পায়। এ ছাড়া নবজাতক মায়েদের জন্য প্রতিদিন দুধ ও ৩ হাজার ইউয়ান মূল্যের দুগ্ধপণ্যের ভাউচারও দেওয়া হয়।

ইয়িং নামে নিংশিয়া অঞ্চলের এক নারী বলেন, ‘পুরো খরচ না মেটালেও এই ভাতা শিশুদের দুধ ও ডায়াপারের মতো প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে সাহায্য করে।’

এদিকে জনসংখ্যাবিদ ও সমালোচকদের মতে, শুধু আর্থিক সহায়তা দিয়ে জন্মহার বাড়ানো কঠিন। সন্তান পালনের খরচ, চাকরির অনিশ্চয়তা, অর্থনৈতিক স্থবিরতা, লিঙ্গবৈষম্য এবং নারীদের ওপর গৃহস্থালি দায়িত্বের চাপ—এসবই যুব সমাজকে বিয়ে ও সন্তান নেওয়া থেকে বিরত রাখছে।

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমা জ্যাং বলেন, ‘সুলভ শিশু যত্ন, পিতামাতার ছুটি এবং নারীদের চাকরি সুরক্ষায় বিনিয়োগ ছাড়া এই উদ্যোগ খুব একটা ফলপ্রসূ হবে না।’

জনগণকে পরিবার গঠনে উৎসাহ দিতে সিচুয়ান প্রদেশ বিবাহ ছুটি ৫ দিন থেকে ২৫ দিন এবং মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১৫০ দিন করার প্রস্তাব দিয়েছে। সব মিলিয়ে চীন এখন একটি ‘জন্ম বান্ধব সমাজ’ গঠনের পথে এগোচ্ছে।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button