ওসির বিরুদ্ধে ছেলেকে রাজনৈতিক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ তুলে অঝোরে কাঁদলেন মা


জমিসংক্রান্ত বিরোধের সমাধান করতে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিস করার কথা বলে আল-আমিনকে (২৮) ডেকে নেওয়ার পর তাঁকে সাজানো রাজনৈতিক মামলায় জেলে পাঠিয়েছেন ওসি মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ওসির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করে অঝোরে কাঁদলেন আল-আমিনের মা আনারা বেগম।
আল-আমিন নগরীর বলাশপুর এলাকার মৃত নুরুল ইসলাম ও আনারা বেগম দম্পতির ছেলে। ২০২১ সাল থেকে জমি নিয়ে আনারা বেগম ও প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানের দ্বন্দ্ব চলছে। মনিরুজ্জামান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের উপপ্রধান প্রকৌশলী।
আনারা বেগম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কিনি। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক বাউন্ডারি তুলে দেন প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস বৈঠক হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করতে গেলে বাধা হয়ে দাঁড়ান মনিরুজ্জামান ও তাঁর পক্ষের লোকজন।
আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে আল-আমিনসহ আরও কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে মনিরুজ্জামান কোতোয়ালি মডেল থানাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন। বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম থানায় উভয় পক্ষকে ডাকেন। গত শনিবার (২৬ জুলাই) রাত আটটায় দরবার শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। দরবারের শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র আমাদেরগুলো ঠিক পায় সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর রুমে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছন পেছন আমি গিয়ে প্রতিবাদ করলে আমার সাথেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। আল-আমিনকে লকাপে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। সে রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় জেলে পাঠানো হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে আনারা বেগম বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানদের মানুষ করেছি। আল-আমিন মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। সে ক্রোকারিজের ব্যবসা করে পুরো সংসার চালায়। রাজনীতির সাথে কোনোভাবেই সে জড়িত নয়। অথচ ওসি তাকে রাজনৈতিক মামলায় জেলে ঢুকিয়েছে। মনিরুজ্জামানের টাকা ও ক্ষমতার কাছে আমি হেরে গেছি। এই দেশে কোনো বিচার নেই, বিচার টাকার কাছে বন্দী। আমার ছেলে যদি মুক্তি না পায়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে সে বিপথে গেলে পুলিশ, সমাজ এবং রাষ্ট্র এর জন্য দায়ী থাকবে। তাই অবিলম্বে আমি আমার নিরপরাধ ছেলের মুক্তি দাবি করছি।’ সংবাদ সম্মেলনের আগে ব্যানারে থাকা আল-আমিনের ছবি আগলে ধরে কান্নাকাটি করেন আনারা বেগম।
আল-আমিনের বিরুদ্ধে করা মামলার বিবরণে জানা গেছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল টিম আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুর পাড় সেলফি নামক স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করে। এ ঘটনায় পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গত ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরীর কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
এদিকে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘আল-আমিন যুবলীগ করে। যুবলীগের নেতা-কর্মীদের সাথে তার ছবি রয়েছে। আল-আমিনকে থানায় সালিসে ডেকে পরে আটক করা হয়েছে। কিন্তু মামলায় দেখানো হয়েছে, তাকে কেওয়াটখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়—এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে বিষয়টি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাই ভালো বলতে পারবেন।
জেলা পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, ‘আল-আমিনের মা ছেলের মুক্তির দাবিতে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে। বিষয়টি আমি শুনেছি। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’