এশিয়া কাপে পাকিস্তান ম্যাচ বয়কট করলে ক্ষতিটা ভারতেরই


ভারত-পাকিস্তান রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যুদ্ধ থেমে গেছে আড়াই মাস আগেই। তবে এবার দুই দেশের ক্রিকেট নিয়ে বেজে গেছে যুদ্ধের দামামা। এশিয়া কাপের সূচি প্রকাশের পরও ম্যাচটি আদৌ মাঠে গড়াবে কিনা, সেটা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।
২০২৫ এশিয়া কাপের সূচি প্রকাশ হয়েছে এ সপ্তাহের শনিবার। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্টে এবারও ভারত-পাকিস্তানকে রাখা হয়েছে একই গ্রুপে। সূচি প্রকাশের পর ভারতের সাবেক ক্রিকেটার শ্রীশান্ত দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ম্যাচ বাতিল তো বটেই, এমনকি পাকিস্তানকেই এশিয়া কাপ থেকে বাদ দেওয়ার দাবি তুলেছেন। আর কাগজে-কলমে ২০২৫ এশিয়া কাপের আয়োজক ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ চাইলে বিসিসিআই বাতিল করতেই পারে। শুধু টুর্নামেন্টের আয়োজক বলেই না। বিশ্ব ক্রিকেটের প্রশাসনিক কাঠামোতে গত কয়েক বছরে ছড়ি ঘোরাচ্ছে বিসিসিআই। কিন্তু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে ম্যাচ বয়কট করলে ক্ষতিটা ভারতেরই হবে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানা গেছে। এনডিটিভিকে এক সূত্র বলেছেন, ‘এটা দ্বিপক্ষীয় সিরিজ না। এটা বহুজাতিক একটা টুর্নামেন্ট। যদি ভারত ম্যাচ না খেলে বা বয়কট করে, তাহলে পাকিস্তান অনেক লাভবান হবে। এটা তাদের (পাকিস্তান) জন্য ওয়াকওভার হিসেবে কাজ করবে। এটা প্রত্যাশিত না।’
পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে কী হবে, সেটার ব্যাপারে বল বিসিসিআইয়ের কোর্টে ঠেলে দিয়েছে ভারতের ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। ভারতের বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পরিধির মধ্যে আসেনি বিসিসিআই। যেখানে জাতীয় ক্রীড়া পরিচালনা বিল এখনো পাস হয়নি। তাই মন্ত্রণালয় এখানে কিছু বলতে পারবে না। তবে আমরা অপেক্ষা করে দেখব বিসিসিআই এই ব্যাপারে কী উত্তর দেয়।’
এখন প্রশ্ন হলো ভারতের জাতীয় ক্রীড়া পরিচালনা বিল কী? বিলটিতে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ও জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজনে ভারতের জাতীয় দল এবং স্বতন্ত্র ক্রীড়াবিদদের আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণের ওপর ক্রীড়া মন্ত্রণালয় হস্তক্ষেপ করতে পারবে। চাইলে মন্ত্রণালয় যুক্তিসঙ্গত উপায়ে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে। বিলটি গত সপ্তাহে সংসদে পেশ করা হয়েছিল। তবে এটি পাস হতে এখনো কিছুটা সময় লাগবে। কারণ, রাষ্ট্রপতির সম্মতির আগে এই বিলে লোকসভা এবং রাজ্যসভা উভয়েরই অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
রাজনৈতিক বৈরিতায় ১২ বছর ধরে ভারত-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সিরিজ হচ্ছে না। আইসিসি ইভেন্ট বা এশিয়া কাপ ছাড়া মুখোমুখি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই তাদের। এটাও একরকম বন্ধ হতে বসেছিল এ বছরের এপ্রিলে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের গুলিতে পর্যটকন নিহতের ঘটনায়। এই ঘটনায় কদিন আগে এজবাস্টনে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লিজেন্ডসে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বাতিল হয়েছিল। বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকেই সেখানে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। ভারতের সাবেক বাঁহাতি ব্যাটার এই সিদ্ধান্ত ১১ মে নিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
ভারতের সাবেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের মতে, দ্বিপক্ষীয় সিরিজ যেহেতু হয় না, তাহলে আইসিসি ইভেন্ট, এশিয়া কাপেও ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হওয়ার দরকার নেই। শ্রীশান্ত-আজহারউদ্দিনের কথার সঙ্গে অবশ্য একমত নন সৌরভ গাঙ্গুলী। বার্তা সংস্থা এএনআইকে সৌরভ কদিন আগে বলেন, ‘আমি ঠিকই বলছি। খেলাধুলা অবশ্যই চলা উচিত। পেহেলগামের ঘটনা কখনোই ঘটা উচিত না। সন্ত্রাসবাদ অবশ্যই বন্ধ করা উচিত। ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এগুলো অতীত। খেলাধুলা অবশ্যই হওয়া উচিত।’
এবার এশিয়া কাপের ‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশ পড়েছে শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও হংকংয়ের বিপক্ষে। আর ‘এ’ গ্রুপে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান। ভেন্যু ও ম্যাচ শুরুর সময় এখনো চূড়ান্ত না হলেও ম্যাচের দিনক্ষণ ঠিক হয়ে গেছে। সূচি অনুযায়ী ১৪ মে মুখোমুখি হবে ভারত-পাকিস্তান। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর গ্রুপে আমিরাত-ওমানকে রাখার কারণ যে ভারত-পাকিস্তান বারবার মুখোমুখি হওয়া, সেটা না বললেও চলছে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে স্টেডিয়ামের গ্যালারি দর্শকে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এ ছাড়া এই ম্যাচ ঘিরে পৃষ্ঠপোষক, আয়োজকেরা কোটি কোটি টাকা লাভ করে থাকেন।