শিরোনাম
‘মামলা করি কী হইবে, পুলিশ থাকিয়াও হামার জীবনে নিরাপত্তা নাই’শেবাচিম হাসপাতালের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভসৌদি আরবের বিনিয়োগ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টাকে নিমন্ত্রণ জানালেন যুবরাজ মোহাম্মদচাঁদপুরে ৩৯০ কেজি জেলিযুক্ত চিংড়ি জব্দথাই রাজার সন্ন্যাসী পুত্রের আবেগঘন বার্তা কীসের ইঙ্গিতভূরুঙ্গামারীতে ডিবি পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগ, গ্রেপ্তার দুইসাশ্রয়ী মূল্যে ওয়ালটনের জনপ্রিয় তিন মনিটরপ্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ভর্তি বিজ্ঞপ্তি কাল, পরীক্ষা তিন ইউনিটেভবিষ্যতে কেউ আমাদের অধিকার চাইলে তার পরিণতি শেখ হাসিনার মতো হবে: জোনায়েদ সাকিবাংলাদেশসহ ৯৮ দেশে ভূমিকম্পের আগাম বার্তা অ্যান্ড্রয়েড ফোনে, সক্রিয় করবেন যেভাবে

বিয়ামে এসি বিস্ফোরণ নয়, নথি পোড়াতে গিয়ে আগুনে পুড়ে মরেন দুজন: পিবিআই

বিয়ামে এসি বিস্ফোরণ নয়, নথি পোড়াতে গিয়ে আগুনে পুড়ে মরেন দুজন: পিবিআই

‎গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিয়াম) ফাউন্ডেশনের একটি অফিস কক্ষে এসি বিস্ফোরণে অফিস সহায়ক ও গাড়িচালকের মৃত্যু হয়। ফায়ার সার্ভিসও জানায়, এসি বিস্ফোরণে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।

তবে ঘটনার পাঁচ মাস পর জানা যায়, এসি বিস্ফোরণে নয়, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। তিন মাস ধরে তদন্তের পর এ তথ্য জানাল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন ইউনিট (এসআইঅ্যান্ডও)।

‎পুলিশ জানায়, এসি বিস্ফোরণে নয়, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। তবে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল না, পেট্রল ঢেলে শুধু নথিপত্র পুড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন আসামিরা। নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলার কাজের জন্য ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার চুক্তি হয়।

‎‎পিবিআই এ হত্যা মামলার আসামি চিহ্নিত ও পরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে গত ২৫ জুলাই কুড়িগ্রাম ও ঢাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন, মূল পরিকল্পনাকারী বিয়ামের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম (৩৮) এবং তাঁর ভাড়াটে সহযোগী মো. আশরাফুল ইসলাম (৩৬)।

আজ ‎সোমবার দুপুরে রাজধানীর কল্যাণপুরে পিবিআই উত্তর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুর রহমান।

‎‎তিনি বলেন, গত ২৭ জুলাই রাত ৩টা ২০ মিনিটের দিকে বিয়াম ভবনে ৫০৪ নম্বর কক্ষে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ৫০৪ নম্বর কক্ষে রক্ষিত সমিতির দলিলপত্র, নামজারি সংক্রান্তে কাগজপত্র, ব্যাংক হিসাব, চেক বই, জমি ক্রয় সংক্রান্ত ৪টি চুক্তিপত্র, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, আসবাবপত্র, কক্ষের এসিসহ অন্যান্য মালামাল পুড়ে ভস্মীভূত, চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়।

‎অফিস সহায়ক মো. আব্দুল মালেক ঘটনাস্থলেই মারা যান এবং সমিতির সেক্রেটারির গাড়িচালক মো. ফারুক গুরুতর আহত হলে তাঁকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

এ ঘটনায় বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত সচিব মো. মশিউর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন। থানা-পুলিশ দুই মাস তদন্তের পর গত ৬ মে মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়।

‎সংস্থাটির তদন্তে জানা যায়, ২৭ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মাথায় মাঙ্কি ক্যাপ, মুখে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস ও স্যান্ডেল পরিহিত অবস্থায় ৩০-৩৫ বছর বয়সী এক যুবক বিয়াম ভবন মাঠের পশ্চিম দিক থেকে এসে সিঁড়ি দিয়ে ভবনের পঞ্চম তলায় চলে যান এবং সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে দেন। ‎

‎পিবিআইয়ের টিম এআই-এর মাধ্যমে আসামির ছবি শনাক্ত করে। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামি মো. আশরাফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আশরাফুল অপরাধ স্বীকার করেন। তাঁর দেওয়া তথ্যমতে, ঘটনার মূল হোতা বিয়ামের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলামকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

‎‎প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আশরাফুল পিবিআইকে জানান, বিয়ামের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম জাহিদুল ইসলাম তাঁর পূর্ব পরিচিত এবং এলাকার ভাই। জাহিদুল ইসলাম তাঁকে গত বছরের ৫ আগস্টের দু-তিন মাস আগে ঢাকায় এনে মগবাজার থ্রি-স্টার হোটেলে একটানা ৫ / ৬ মাস রাখেন। জাহিদুল ইসলামের সূত্র ধরে তিনি প্রায়ই বিয়াম প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতেন এবং ওই অফিসের কয়েকজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। সমিতির মূল নথিপত্র স্থায়ীভাবে ধ্বংসের লক্ষ্যে বিয়ামের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম জাহিদুল ইসলাম আসামি আশরাফুল, অফিস সহায়ক আ. মালেক ও গাড়িচালক ফারুক মিলে পরিকল্পনা করেন।

‎‎পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ শেষে তাঁদের ১০ / ১২ লাখ টাকা দেওয়ার মৌখিক চুক্তি করে। একদিন জাহিদ আশরাফুলকে কিছু টাকা দিয়ে বিয়ামের পঞ্চম তলার সিসি ক্যামেরা বন্ধ করতে বলেন। জাহিদের দেওয়া টাকায় আশরাফুল মাস্ক, মাঙ্কি ক্যাপ, হ্যান্ড গ্লাভস ও ফুল স্লিভ শার্ট কেনেন।

‎‎তিনি বলেন, ঘটনার দিন আশরাফুল ক্যাপ, মাস্ক এবং হ্যান্ডগ্লাভস পরে বিয়াম ভবনের পঞ্চম তলায় উঠে ক্যামেরা বন্ধ করে দেন। ক্যামেরা বন্ধ করার পর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অফিস সহায়ক মালেক ও ড্রাইভার ফারুক চতুর্থ তলার ৫০৪ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করেন। তখন আশরাফুল দরজার পাশে সিঁড়ির কোনায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। ৫০৪ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করে গাড়িচালক মালেক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন।

পিবিআই কর্মকর্তা ‎আব্দুর রহমান আরও বলেন, আশরাফুল পঞ্চম তলা থেকে তৃতীয় তলা নামতেই বিকট বিস্ফোরণ হয়। ঘটনাস্থলেই অফিস সহায়ক মালেক মারা যান। জাহিদ গাড়ি নিয়ে আশরাফুলের সহযোগিতায় গুরুতর আহত অবস্থায় ড্রাইভার ফারুককে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে ভর্তি করান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ড্রাইভার ফারুক মারা গেলে জাহিদ আশরাফুলকে ডেকে নিয়ে ঢাকা ছেড়ে গা-ঢাকা দিতে বলেন। জাহিদের কথামতো পরদিন রংপুর চলে যান তিনি। এই কাজে আশরাফুলকে ১০-১২ লাখ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও জাহিদ এখন পর্যন্ত তাঁকে ৬-৭ লাখ টাকা দিয়েছেন।

‎‎গত ২৬ জুলাই বিয়ামের প্রশাসনিক কর্মকর্তা গ্রেপ্তার জাহিদুল ইসলাম এবং মো. আশরাফুলকে আদালতে সোপর্দ করা হলে তাঁরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে জানায় পুলিশ।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button