শিরোনাম

পণ্য ডেলিভারির জন্য মেট্রোরেল ব্যবহার করবে চীনের রোবট

পণ্য ডেলিভারির জন্য মেট্রোরেল ব্যবহার করবে চীনের রোবট

বিজ্ঞান কল্পকাহিনির মতো দৃশ্য এবার বাস্তব হচ্ছে চীনের শেনঝেনে। শহরের ব্যস্ত মেট্রোস্টেশনে এখন দেখা মিলছে স্বয়ংক্রিয় চার চাকার রোবটের। রোবটগুলো শুধু ট্রেনে চলাফেরা করেই থেমে থাকছে না, এগুলো পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে সরাসরি দোকানের দরজায়। প্রযুক্তিনির্ভর এই উদ্যোগ শুধু অভিনবই নয়, বরং শহরের পুরোনো সমস্যার আধুনিক সমাধানও বটে।

সম্প্রতি শহরটির সাবওয়েতে পরীক্ষামূলকভাবে এই রোবটগুলোর যাত্রা শুরু হয়েছে। যেগুলোর উদ্দেশ্য—সরাসরি ‘৭-ইলেভেন’ স্টোরে পণ্য পৌঁছে দেওয়া।

শেনঝেন মেট্রোর মালিকানাধীন কোম্পানি ভানকের (Vanke) একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে ৪১টি চার চাকার রোবট। এই রোবট মেট্রোরেলে ওঠানামা করে এবং বিভিন্ন স্টোরে পণ্য সরবরাহ করে। এই পরীক্ষামূলক কার্যক্রমটি কম ভিড়ের সময় পরিচালিত হয়েছে। এই রোবটগুলো ভবিষ্যতে ১০০টির মতো ৭-ইলেভেন স্টোরে নিয়মিতভাবে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে বলে আশা করছে কোম্পানিটি।

সাউথ চীন মর্নিং পোস্টের বরাতে জানা যায়, রোবটগুলো প্রায় তিন ফুট উচ্চতার এবং এদের গায়ে লাগানো স্ক্রিনে চোখ-মুখসহ কার্টুনজাতীয় হাসিমুখ দেখা যায়। এক ভিডিওতে দেখা যায়, সাবওয়ে স্টেশনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রোবটগুলো। তারা প্রথমে মানব যাত্রীদের নামতে দেয়। এরপর নিজেরা ট্রেনে ওঠে।

নির্দিষ্ট স্টেশনে পৌঁছে নিজেরাই বেরিয়ে আসে এবং একটি রিমোটচালিত এলিভেটরের মাধ্যমে ওপরে ওঠে। এরপর একে একে ৭-ইলেভেন স্টোরের সামনে পৌঁছায়, যেখানে একজন কর্মী রোবটের গায়ের বাক্স খুলে পণ্য বের করেন। ভিডিওতে দেখা যায়, এক কর্মী একটি কার্টনভর্তি চা বের করছেন।

রোবটগুলো পরিচালিত হয় রোবোটিকস ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমন্বয়ে তৈরি এক জটিল প্ল্যানিং সিস্টেমের মাধ্যমে। এতে রয়েছে প্যানোরামিক লাইডার প্রযুক্তি, যা স্বচালিত গাড়িতেও ব্যবহৃত হয়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে রোবট তার চারপাশের পরিবেশ বুঝতে পারে।

পুরো সরবরাহ প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করে একটি এআইভিত্তিক ডিসপ্যাচিং সিস্টেম। এই সিস্টেম ডেলিভারির ধরন, পণ্যের ধরন এবং সাবওয়ে স্টেশনের অবস্থা বিবেচনা করে সবচেয়ে কার্যকর পথ নির্ধারণ করে।

চীনের শেনঝেন শহরের বিশাল সাবওয়ে নেটওয়ার্কে আওতায় রয়েছে ৩০০-র বেশি স্টেশন এবং অধিকাংশ স্টেশনেই রয়েছে দোকানপাট। এই উদ্যোগটি সড়কপথে পণ্য পরিবহনের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে সময় ও শ্রম সাশ্রয় করবে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্টরা।

একজন স্টোর ম্যানেজার বলেন, ‘আগে আমাদের পণ্য সড়কপথ দিয়ে সাবওয়ে স্টেশনে পাঠাতে হতো। পার্কিংয়ের ঝামেলা, ব্যস্ত সময়ে যাত্রী ভিড়—সব মিলিয়ে দেরি হতো এবং খরচও বেশি পড়ত।’

এখনো পর্যন্ত ৭-ইলেভেন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ উদ্যোগটি শেনঝেন শহরের ‘এম্বডিড ইন্টেলিজেন্ট রোবট অ্যাকশন প্ল্যান’-এর অংশ। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো ২০২৭ সালের মধ্যে বিভিন্ন খাতে রোবট ব্যবহারের হার বাড়ানো। সামগ্রিকভাবে চীনা সরকার রোবটকে জনজীবনের অংশ করার ব্যাপারে আগ্রহী।

চলতি বছর এপ্রিলেই ২০টি দুই পায়ের রোবট দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল, যেটিকে বলা হয় বিশ্বের প্রথম ‘হিউম্যানয়েড হাফ ম্যারাথন’। যদিও মাত্র চারটি রোবটই শেষ পর্যন্ত ম্যারাথন শেষ করতে পেরেছিল—বাকি সবাই পড়ে গিয়ে বা বিকল হয়ে পড়ে।

এ ছাড়া চীনা কোম্পানি ইউনিট্রি সম্প্রতি দাবি করেছে, তারা বিশ্বে প্রথম হিউম্যানয়েড রোবটের মধ্যে বক্সিং ম্যাচ আয়োজন করেছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের উদ্যোগ বরাবরই কিছুটা বিতর্কিত। যেমন—নিউইয়র্কে সাবওয়ে স্টেশনে টহলরত ডিম আকৃতির এক রোবটকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে বন্ধ করে দিতে হয়। আবার, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চালু হওয়া খাবার সরবরাহকারী ছোট রোবটগুলো মাঝেমধ্যেই রাস্তা হারিয়ে ফেলে, গর্তে পড়ে যায়, এমনকি রাস্তা পার হতেও হিমশিম খায়।

এমনকি, আমাজন নিজেও এআইচালিত রোবট তৈরি করছে, যারা ভবিষ্যতে ভ্যান থেকে নেমে পণ্য ডেলিভারি দেবে। এর আগে ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় ভাঙচুরের শিকার হয়ে ছিল হিচবট নামের একটি জনপ্রিয় রোবট।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button