রাবিতে আগুনঝরা জুলাইয়ের প্রতিরোধ


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসে বারবার রেখেছে সাহসিকতার স্বাক্ষর। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানেও এই উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ রেখেছে ব্যতিক্রমী ভূমিকা।
আন্দোলন শুরু হয় পোষ্য কোটা সংস্কারের দাবিতে। একই সময়ে শিক্ষকেরা ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিলের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিলে শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে আন্দোলনে যুক্ত হন। জুলাইয়ের শুরুতেই প্যারিস রোডে মানববন্ধন, সিনেট ভবনের সামনে শিক্ষকদের অবস্থান এবং শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাপ বাড়তে থাকে।
৬ জুলাই থেকে শুরু হয় লাগাতার সড়ক ও রেলপথ অবরোধ। ১১ জুলাই ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে রেললাইনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। ১৪ জুলাই ৯ কিলোমিটার পথ হেঁটে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেন তাঁরা। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও একাত্মতা প্রকাশ করেন।
১৫ জুলাই রাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে মন্তব্য করলে ক্যাম্পাসে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। রাত ২টায় ছাত্রী হল থেকেও মিছিল বের হয়।
১৬ জুলাই ছাত্রলীগের আন্দোলন দমনের ঘোষণায় পরিস্থিতি চূড়ান্ত রূপ নেয়। সকালেই শিক্ষার্থীরা সংগঠিত হয়ে হবিবুর রহমান হলের সামনে জমায়েত হন। শিক্ষার্থীরাও নিজেদের আত্মরক্ষার প্রস্তুতি নেন। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতারা ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। শিক্ষার্থীরা হলগুলোতে অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করে।
রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। ১৭ জুলাই সকালেই শিক্ষার্থীরা উপাচার্যসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করেন।
এরই মধ্যে ক্যাম্পাস ঘিরে নেয় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি। সন্ধ্যায় পুলিশের অভিযান শুরু হয়। তারা সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ছুড়তে শুরু করে। তখনকার সেই মুহূর্ত ছিল জীবনের সবচেয়ে আতঙ্কজনক অভিজ্ঞতা।
পরদিন আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসের বাইরে। সাধারণ মানুষও যুক্ত হন। কারফিউ জারির পরও রাজশাহীতে ‘শেইম শেইম ডিক্টেটর’ স্লোগানে কারফিউ ভাঙা হয়।