তিমির ডাক নাকি শত্রু সাবমেরিন, জানাবে এআই


যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক নৌবাহিনীর কর্মকর্তাদের প্রতিষ্ঠিত স্টার্টআপ স্পিয়ার এআই প্রথমবারের মতো বাইরের কোনো উৎস থেকে বিনিয়োগ পেয়েছে। কোম্পানিটি সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ থেকে সংগৃহীত জটিল ডেটা বিশ্লেষণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে থাকে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান পানির নিচের শ্রবণযন্ত্র বা প্যাসিভ অ্যাকুস্টিক ডেটা নিয়ে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য হলো—সাবমেরিন অপারেটরদের এআইয়ের মাধ্যমে বুঝতে সাহায্য করা, পানির নিচে শোনা কোনো শব্দ আসলে কী। এটা কি কোনো সামুদ্রিক ঝড়, কোনো তিমি, না কি শত্রুপক্ষের জাহাজ। পাশাপাশি সেই বস্তু কোথায় আছে এবং কী গতিতে চলছে, সেটাও শনাক্ত করা।
স্পিয়ার এআইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা মাইকেল হান্টার ও জন ম্যাগানিগল—দুজনেই যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে কাজ করেছেন। হান্টার একসময় নেভি সিল ও জয়েন্ট স্পেশাল অপারেশন্স কমান্ডে বিশ্লেষক হিসেবে পরামর্শ দিয়েছেন, আর ম্যাগানিগল ছিলেন পরমাণু সাবমেরিনের কমান্ডার।
সাধারণত এআই যেসব ডেটার ওপর প্রশিক্ষিত হয় যেমন—টেক্সট বা ছবি, সেগুলো দীর্ঘ সময় ধরে লেবেলিং বা শ্রেণিবদ্ধ করা হয়ে থাকে। স্কেল এআইয়ের মতো কোম্পানিগুলো এ কাজ করে থাকে, যারা সম্প্রতি মেটা প্ল্যাটফর্মসের সঙ্গে ১৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করেছে।
তবে পানির নিচের শব্দতথ্য আলাদা। এই জটিল শব্দতথ্য বিশ্লেষণ করতে বিশেষ ধরনের যন্ত্র (হার্ডওয়্যার) ও সফটওয়্যার তৈরি করছে স্পিয়ার এআই, যা এই ডেটাগুলোকে এমনভাবে সাজায় ও প্রস্তুত করে, যাতে সেগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সহজে বুঝতে ও বিশ্লেষণ করতে পারে।
কোম্পানিটি এমন সেন্সর বিক্রি করে, যা ভাসমান বয়া বা নৌযানে লাগানো যায়। সঙ্গে রয়েছে একটি সফটওয়্যার টুল, যেটি ডেটা লেবেল করতে ও সাজাতে সাহায্য করে।
এ মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী এই ডেটা লেবেলিং টুল ব্যবহারের জন্য স্পিয়ার এআইকে ৬ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি দিয়েছে।
২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত স্পিয়ার এআই এত দিন সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে চলেছে। বর্তমানে এর কর্মী সংখ্যা প্রায় ৪০ জন। প্রতিষ্ঠানটির সিইও হান্টার জানিয়েছেন, কোর্টিকাল ভেঞ্চারস নামের একটি এআইভিত্তিক ভেঞ্চার ফার্ম ও ‘স্কেয়ার দ্য বিয়ার’ নামের একটি প্রাইভেট ইকুইটি ফার্ম থেকে তারা ২৩ লাখ ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে।
এই অর্থ ব্যবহার করে কর্মীর সংখ্যা দ্বিগুণ করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। এর মাধ্যমে সরকারি চুক্তি এবং পানির নিচের পাইপলাইন ও কেবল পর্যবেক্ষণের মতো বেসরকারি বাণিজ্যিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা যায়। স্পিয়ার এআই ভবিষ্যতে পরামর্শসেবা দেওয়ার পরিকল্পনাও করছে, যা অনেকটা পালান্টিয়ারের মতো প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের মডেলের অনুরূপ।
হান্টার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা চুক্তি আসার আগেই পণ্য তৈরি করে তা বাজারে আনতে চেয়েছি। এটি শুধু সম্ভব হয় বেসরকারি পুঁজি থাকলেই।’