শিরোনাম

রাষ্ট্রের মূলনীতিতে ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’ যুক্ত করার প্রস্তাব

রাষ্ট্রের মূলনীতিতে ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’ যুক্ত করার প্রস্তাব

সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার ও গণতন্ত্র যুক্ত করার প্রস্তাব করেছিল সংবিধান সংস্কার কমিশন। সংলাপে এর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে প্রায় সব রাজনৈতিক দল। তবে বিদ্যমান সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিটি বাদ দিলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা করছে বামপন্থী দলগুলো। এমন পরিস্থিতিতে সংস্কার কমিশন নতুন করে ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি ও স্বাধীনতা’ নীতিটি যুক্ত করার প্রস্তাব করবে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের গত রোববারের সংলাপে সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে কমিশনের প্রস্তাবিত মূলনীতি যুক্ত করার বিষয়ে প্রায় সব দল একমত প্রকাশ করে। এর বাইরে বিএনপি, জামায়াতসহ ডান ও মধ্যপন্থী দলগুলো সংস্কার কমিশন প্রস্তাবিত মূলনীতির সঙ্গে জিয়াউর রহমানের আমলের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে যোগ করা ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ যুক্ত করার কথা বলে। তবে সিপিবি, বাসদ, গণফোরামসহ বামপন্থী কয়েকটি দল বিদ্যমান চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গে কমিশনের প্রস্তাবিত মূলনীতি যুক্ত করার প্রস্তাব করে। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না নিয়েই আলোচনা মুলতবি করা হয়। একই সঙ্গে কমিশন থেকে বলা হয়, তারা নতুন একটি প্রস্তাব হাজির করবে।

আজ বুধবার অনুষ্ঠেয় আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে এবং আলোচনার যে সেন্টিমেন্ট, সে দুটোকে ধারণ করে একটা প্রস্তাব হাজির করব। কারণ, আমাদের প্রস্তাবিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার ও গণতন্ত্র নিয়ে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য আছে।’

আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাব নিয়ে দলগুলোর প্রশ্ন নেই। কিন্তু নতুন কিছু বিষয় সামনে এসেছে। আবার আমাদের প্রস্তাবগুলো যুক্ত হবে, নাকি (অন্য কোনোটির স্থলে) রিপ্লেস (প্রতিস্থাপিত) হবে, তা-ও আলোচনার বিষয়। এগুলোকে ধারণ করে একটা খসড়া কালকের (বুধবার) বৈঠকে দেব।’

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়ার বিষয়ে বামপন্থী দলগুলো ছাড়া বিএনপি, জামায়াতসহ অধিকাংশ দল একমত হয়েছে। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে সংবিধানে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার ও গণতন্ত্রের সঙ্গে ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’ যুক্ত করার প্রস্তাব করা হবে।

কমিশন-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি যুক্ত করা হলে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়া নিয়ে যাদের উদ্বেগ ও আশঙ্কা রয়েছে, তাদের খানিকটা স্বস্তি দেওয়া যাবে বলে মনে করি।’

রোববারের আলোচনায় রাষ্ট্রের মূলনীতি প্রসঙ্গে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব বিদ্যমান মূলনীতির সঙ্গে যুক্ত করা হবে নাকি আগেরগুলোর জায়গায় প্রতিস্থাপন করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়। বিএনপি, জামায়াতসহ অধিকাংশ দল বিদ্যমান মূলনীতির স্থলে এগুলো প্রতিস্থাপন করার কথা বলে। একই সঙ্গে নিজেরা নির্বাচনে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিজয়ী হলে ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ এবং ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ যুক্ত করার পক্ষে তারা। কিন্তু রাষ্ট্রের বিদ্যমান চার মূলনীতিকে (যা স্বাধীনতার পর গৃহীত প্রথম সংবিধানের মূলনীতি ছিল) মুক্তিযুদ্ধের ধারক ও বাহক বলেছে গণফোরাম, সিপিবি, বাসদসহ কয়েকটি বামপন্থী দল। দলগুলো মনে করে, এসব নীতি বাদ দেওয়া হবে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করার শামিল।

এমন পরিস্থিতিতে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বিদ্যমান মূলনীতির সঙ্গে কিছু ‘যুক্ত’ বা ‘প্রতিস্থাপন’ করার কথা না বলে নতুন কোনো শব্দ ব্যবহার করে সব পক্ষকে এক জায়গায় আনতে চায় কমিশন।

সংস্কার কমিশনের এক সদস্য বলেন, ‘আমরা যদি বলি আমাদের প্রস্তাব যুক্ত করা হবে, তার অর্থ হচ্ছে, বিদ্যমান সংবিধানের মূলনীতির সঙ্গে যুক্ত করা হবে। আবার যদি বলি আমাদের প্রস্তাব বিদ্যমান নীতিকে রিপ্লেস (প্রতিস্থাপন) করবে, তখন যাঁরা আগেরটি রাখতে চান, তাঁরা আপত্তি করতে পারেন। তাই আমাদের এমন কিছু করতে হবে, যার মাধ্যমে সবাইকে এক রাখার পাশাপাশি ভবিষ্যতের পথ খোলা রাখা যায়।’

সংস্কার কমিশন বলেছে, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা কর্তব্য বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। কমিশনের এক সদস্য বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রে রাষ্ট্র পরিচালনার কিছু মূলনীতির উল্লেখ থাকলেও কোনো সরকারই সেগুলোকে গুরুত্ব দেয়নি।’

দুই দিন বিরতির পর আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ষষ্ঠ দিনের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। দিনের আলোচ্যসূচিতে শুরুতেই রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি); দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ; উচ্চকক্ষের নির্বাচনপ্রক্রিয়া; উচ্চকক্ষের দায়িত্ব ও ভূমিকা এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button