শিরোনাম

চ্যালেঞ্জ বাড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্যে, দুশ্চিন্তায় দেশের উদ্যোক্তারা

চ্যালেঞ্জ বাড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্যে, দুশ্চিন্তায় দেশের উদ্যোক্তারা

ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর দুই দেশের যুদ্ধে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। এতে আমদানিনির্ভর অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এই শঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে গত শনিবার ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা। ইতিমধ্যে ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা জ্বালানি তেল, এলএনজিসহ সব ধরনের জ্বালানির আমদানিকে বাধাগ্রস্ত করবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনকে সামনে রেখে দেশের ব্যবসার গতি যে হারে বাড়ানো দরকার, সে হারে বাড়ছে না। দেশের কারখানাগুলোয় দেড়-দুই বছর ধরে গ্যাস-সংকট চলছে, এতে ৪০ শতাংশের বেশি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এই সংকটের সমাধান করতে সরকার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এখন এলএনজি আমদানি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর বাইরে কারখানাগুলো লোডশেডিং মোকাবিলায় জেনারেটর ব্যবহার করে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই উৎপাদন খরচ বাড়বে। পরিবহনের ব্যয় বৃদ্ধি তো স্বাভাবিক ব্যাপার।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুধু জ্বালানি আমদানি নয়; যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে ইরানের বাজারে কোটি ডলারের রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির গতি বাড়বে। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ সব দেশের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি কমে যেতে পারে। এতে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জে পড়বে তৈরি পোশাক খাত।

বিজিএমইএর নবনির্বাচিত সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘নানা চড়াই-উতরাই পার হয়ে আমরা যখন ভালো অবস্থানে যাচ্ছি, তখন ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ আমাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। এই যুদ্ধের কারণে তেলের দাম বাড়লে তার প্রভাব সব খাতে পড়বে। পোশাকশিল্পও এর প্রভাব থেকে বাদ যাবে না।’

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইরানে ইসরায়েলের হামলার আগের দিন আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ৬৭ দশমিক ৯০ ডলার। পরের সাত দিনে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬ ডলার বেড়ে ৭৪ ডলার হয়েছে। শনিবার ইরান মার্কিন হামলার পরিপ্রেক্ষিতে হরমুজ প্রণালি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তেলের দাম ছুঁয়েছে পাঁচ মাসের সর্বোচ্চ সীমা। গতকাল অপরিশোধিত ব্রেন্ট তেলের দাম ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ৭৯ দশমিক ১২ ডলারে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের দাম ২ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৭৫ দশমিক ৯৮ ডলার।

অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান জাইদি সাত্তার বলেন, ‘হরমুজ প্রণালি দিয়ে সারা বিশ্বের ২৫ শতাংশের বেশি জ্বালানি আমদানি হয়। যদি জ্বালানির দাম বাড়ে; তবে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’ তাঁর মতে, ইরান হয়তো বেশি দিন হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে রাখতে পারবে না।

ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ‘দীর্ঘ মেয়াদে সংঘাত চলতে থাকলে জ্বালানির দাম ব্যারেলে ১৩০ ডলার হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কা তৈরি হবে এবং আমাদের রপ্তানি ঝুঁকির মুখে পরবে।’

ইরানের বাজারে বছরে কোটি ডলারের ওপরে রপ্তানি হয়, যার প্রায় পুরোটা পাটজাত সুতা ও বস্ত্র। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে মাস পর্যন্ত ১১ মাসে ইরানে রপ্তানি হয়েছে ১ কোটি ২ লাখ ডলার সমমূল্যের পণ্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই যুদ্ধের কারণে ইরানে পণ্য রপ্তানি কমতে পারে।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button