ঢাকা-বেইজিং-ইসলামাবাদ নতুন ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা চালুর ঘোষণা


বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীন একটি ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা ব্যবস্থা চালু করেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে এ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, এমন দাবি করা হয়েছে তিন দেশের মধ্যে একটি যৌথ বৈঠকের পর দেওয়া ঘোষণায়।
চীনের কুনমিংয়ে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিনিয়োগ, অবকাঠামো, প্রযুক্তিসহ পাঁচটি ক্ষেত্রে সহযোগিতার কথা বলা হয়।
বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রুহুল আলম সিদ্দিক, চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সাই ওয়েইডং ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী কুনমিংয়ের বৈঠকে নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ অনলাইনে বৈঠকের প্রথম পর্যায়ে যোগ দেন।
চীন ও পাকিস্তান শুক্রবার পৃথকভাবে সরকারি বিবৃতি প্রকাশ করে। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ শনিবার রাতে এ বৈঠকের বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, কুনমিংয়ে নবম চীন-দক্ষিণ এশিয়া প্রদর্শনী এবং ষষ্ঠ চীন-দক্ষিণ এশিয়া সহযোগিতা বৈঠকের পাশাপাশি বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান একটি অনানুষ্ঠানিক ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেয়। তিন পক্ষ পারস্পরিক বিশ্বাস, বোঝাপড়া এবং এই অঞ্চলে শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে সম্ভাব্য ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়ে মতবিনিময় করে। তারা অবকাঠামো, সংযোগ, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, সমুদ্রবিষয়ক, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত বিষয়সহ গভীর সহযোগিতার জন্য বেশ কয়েকটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করে।
তিন পক্ষ উন্মুক্ততা, অন্তর্ভুক্তি, সুপ্রতিবেশীসুলভ আচরণ এবং সকল পক্ষের লাভবান হওয়ার পরিস্থিতির নীতিতে সহযোগিতা গড়ে তুলতে সম্মত হয়।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব উল্লেখ করেন, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশীদার হিসেবে তিনটি দেশ ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন অ্যাজেন্ডার সঙ্গে নিজ নিজ জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে একসঙ্গে কাজ করতে পারে। তিনি তিনটি বন্ধুপ্রতিম দেশের জনগণের প্রকৃত সুবিধা প্রদান এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য তাদের মধ্যে শক্তিশালী অংশীদারত্ব গড়ে তোলার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
চীনের বিবৃতি অনুযায়ী, আলোচনা চলাকালে সান ওয়েইডং বলেন, চীন প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ‘একটি ভাগাভাগি ভবিষ্যতের সম্প্রদায়’ গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে চীনের ভালো প্রতিবেশী, ভালো বন্ধু এবং ভালো অংশীদার ও উচ্চমানের বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, এই তিন দেশের জাতীয় পুনরুজ্জীবন ও আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ প্রয়োজন।
সান উল্লেখ করেন চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা তাদের জনগণের অভিন্ন স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে।
ব্যাপক মতবিনিময়ের পর তিন পক্ষ সুপ্রতিবেশীসুলভ, সমতা ও পারস্পরিক বিশ্বাস, উন্মুক্ততা ও অন্তর্ভুক্তি, সাধারণ উন্নয়ন এবং জয়-জয় সহযোগিতার নীতির ভিত্তিতে তাদের সহযোগিতা এগিয়ে নিতে সম্মত হয়। তারা শিল্প, বাণিজ্য, সমুদ্রবিষয়ক, জলসম্পদ, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি, মানবসম্পদ, গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং যুবসমাজের মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রকল্পগুলো অন্বেষণ ও বাস্তবায়নে সম্মত হয়।
চীনের বিবৃতিতে দাবি করা হয়, তিন দেশই সহযোগিতার ক্ষেত্রে প্রকৃত বহুপাক্ষিকতা ও উন্মুক্ত আঞ্চলিকতা মেনে চলে। তাই এই উদ্যোগ কোনো তৃতীয় পক্ষের দিকে নির্দেশিত নয়।
পাকিস্তানের বিবৃতি অনুযায়ী, আমনা বালুচ জনকেন্দ্রিক উন্নয়নের জন্য যৌথ প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে চীন ও দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে আরও গভীর সম্পৃক্ততা তৈরির জন্য পাকিস্তানের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন। তিনি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, কৃষি, ডিজিটাল অর্থনীতি, পরিবেশ সুরক্ষা, সামুদ্রিক বিজ্ঞান, সবুজ অবকাঠামো, সংস্কৃতি, শিক্ষা এবং জনগণ থেকে জনগণে বিনিময়ের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য চীন ও বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে পাকিস্তানের প্রস্তুতির কথা ব্যক্ত করেন।