নামে-বেনামে অভিযোগে বেকায়দায় লামা বন বিভাগ!


লামা বন বিভাগ একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই চক্রের নামে-বেনামে দেওয়া একের পর এক অভিযোগের কারণে বন বিভাগের দাপ্তরিক ও স্বাভাবিক কার্যক্রম থমকে আছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, বন বিভাগ ও বন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। এর ফলস্বরূপ, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে লামা বন বিভাগের ব্যক্তি মালিকানাধীন জোতের কার্যক্রম গত তিন মাস ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে, কারণ ব্যক্তি মালিকানাধীন জোতের চলাচল পাশ ইস্যু করা হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জোতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় লক্ষাধিক মানুষ ভোগান্তিতে পড়লেও তাদের কিছুই করার নেই। স্থানীয় একটি চিহ্নিত চক্র মিথ্যা তথ্য দিয়ে জোতের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অবিরাম অভিযোগ করে চলেছে, যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দপ্তরে লামা বন বিভাগ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করছে। তাই অভিযুক্ত হয়ে তদন্তের মুখোমুখি হওয়ার চেয়ে জোতের কার্যক্রম বন্ধ রাখাই ভালো মনে করছেন তারা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই চিহ্নিত চক্রটি গত চার-পাঁচ মাস ধরে বন বিভাগে আধিপত্য বিস্তার করে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে। তারা বিভিন্ন গণমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে লামা বন বিভাগকে মন্ত্রণালয় ও বন অধিদপ্তরের কাছে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। বন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে লামা বন বিভাগ সম্পর্কে নামে-বেনামে শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে লামা বন বিভাগের জোত পারমিটের কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে।
বর্তমানে সাধারণ মানুষ তাদের বাগানের গাছ চলাচল পাশের অভাবে চট্টগ্রাম, ঢাকা সহ দেশের কোনো জায়গায় বাজারজাত করতে পারছে না। বাগান মালিকরা পারিবারিক প্রয়োজনেও গাছ বিক্রি করতে পারছেন না। ব্যক্তি মালিকানাধীন বাগানের গাছ কর্তন, আহরণ ও বাজারজাত করতে না পারায় লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। তাদের স্বাভাবিক জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ, যার প্রভাব পড়েছে পরিবারের জীবন-জীবিকা নির্বাহ, শিক্ষা, চিকিৎসা সহ অন্যান্য জীবনযাত্রায়।
লামা উপজেলার বাগান মালিক জহির উদ্দিন জানান, বাগানের গাছ বিক্রি করতে না পারায় তিনি বৃদ্ধ বাবার চিকিৎসা করাতে পারছেন না। লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের সাধারণ ব্যবসায়ী বাবুল জানান, ব্যক্তি মালিকানাধীন বাগান কিনে চলাচল পাশের অভাবে বাজারজাত করতে পারছেন না। পরিবারের সদস্যদের স্বর্ণ এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তিনি বাগান কিনেছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “এই অবস্থা চলতে থাকলে আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো উপায় নাই।”
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, জোত পারমিটের অভাবে বিভিন্ন ডিপোতে মজুদ হাজার হাজার ফুট কাঠ রোদে শুকিয়ে এবং বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মজুদ কাঠগুলোর ব্যবহার উপযোগিতা দিন দিন হ্রাস পাওয়ায় বাজারমূল্যও কমে যাচ্ছে। দ্রুত এই অচলাবস্থার নিরসন না হলে গাছের সাথে সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম কষ্টের মধ্যে পড়বে। লামা জোত মালিক ও কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. সেলিম এবং সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ জানান, নিজের বাগানের গাছ নিজেরা কর্তন, আহরণ ও বাজারজাত করতে পারছেন না। বাগান মালিকদের কষ্ট দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং গাছের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা ফতুর হতে চলেছেন। মানুষের জীবনযাত্রার স্বার্থে তারা অপরাধী চক্রটিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন।
লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, “কী করব বুঝতে পারছি না। যে কাজই করছি সেটাকে নেগেটিভভাবে উপস্থাপন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এত পরিমাণ অভিযোগ দেওয়া হয়েছে যে, বর্তমানে তদন্ত মোকাবেলা করব, নাকি অন্য কাজ করব?” তিনি আরও জানান, “গাছ বাগানের মালিকদের কষ্ট দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু অভিযোগের কারণে কিছুই করতে পারছি না। অভিযোগকারীরা কী চায় তাও বুঝতে পারছি না।”
সালাউদ্দিন/সাএ
ক্রাইম জোন ২৪