যেসব বিরোধের জেরে দুই উপজেলায় ঈদের ছুটিতে চার খুন


চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুর উপজেলায় ঈদুল আজহার ছুটি চলার সময় গত এক সপ্তাহে চারটি হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এর মধ্যে জমিসংক্রান্ত বিরোধের কারণে তিনটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। অন্যটি ক্রিকেট খেলার দ্বন্দ্ব নিয়ে ঘটেছে। এসব ঘটনায় আহত এক জনপ্রতিনিধিসহ ১১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুর থানায় এসব হত্যাকাণ্ডে মামলা হয়েছে।
৮ জুন খুন হন শিবগঞ্জ উপজেলার দাইপুখুরিয়া ইউনিয়নের কামালপুরের আলাউদ্দিনের ছেলে মাসুদ রানা (৩৮)। গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একই উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের বাবুপুরের হোসেন আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম ওরফে কালু (৪৮) মারা যান। গত শুক্রবার একই উপজেলারই মোবারকপুর ইউনিয়নের উপরটোলা গ্রামের সিদ্দিক বিশ্বাসের ছেলে নজরুল ইসলাম (৫০) খুন হন। আর গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের সুবইল গ্রামে গত সোমবার (৯ জুন) আবুল হোসেনের ছেলে আব্দুল বাসেদ নামের একজন নিহত হন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিবগঞ্জ উপজেলার দাইপুখুরিয়া ইউনিয়নের কামালপুরের আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে মাসুদ রানার পরিবারের জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। ঈদের আগে ঘাস কাটাকে কেন্দ্র করে আশরাফুল ও তাঁর দুই ছেলে ইসরাফিল ও কাফির সঙ্গে মাসুদ রানার ভাইয়ের বাগ্বিতণ্ডা হয়। ৮ জুন রাতে বিষয়টি মীমাংসার কথা চলছিল। এরই মধ্যে মাসুদ রানার ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হলে তিনি প্রাণ হারান। এ ঘটনায় আরও দুজনকে গুরুতর আহতাবস্তায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গত সোমবার (৯ জুন) রাতে একই উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের বাবুপুরে জমির বিরোধে রফিকুল ইসলামের ওপর তাঁর আপন ভাতিজা আব্দুর রহমানসহ আরও কয়েকজন হামলা চালান বলে অভিযোগ উঠেছে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে গত বৃহস্পতিবার মারা যান তিনি। মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে রফিকুলের লোকজন কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। রফিকুল হত্যায় স্থানীয় বাসিন্দারা তিনজনকে আটক করে পুলিশের কাছে দেন। গত শুক্রবার (১৩ জুন) রাতে শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের ধোবপুকুর এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধে নজরুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর ভাতিজা আনাস ও আব্বাসের কথা-কাটাকাটি হয়। বাদানুবাদের একপযার্য়ে নজরুলকে তাঁরা ছুরিকাঘাত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গুরুতর আহতাবস্তায় স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নজরুলকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এদিকে নজরুলকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন মোবারকপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য সবুজ আলী ওরফে সুজন। তিনি এখন রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এদিকে গত সোমবার (৯ জুন) গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের সুবইল গ্রামে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আব্দুল বাসেদ (৬০) নামের এক বৃদ্ধ নিহত হন। আর এই ঘটনায় আরও আটজন আহত হন।
এ প্রসঙ্গে শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কিবরিয়া বলেন, ঈদুল আজহার ছুটিতে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে তিনটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ইতিমধ্যে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা থানায় মামলা করেছেন। পাঁকা ইউনিয়নের বাবুপুরে রফিকুল ইসলাম খুনের ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য দুটি ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গোমস্তাপুর উপজেলায় ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে গোমস্তাপুর থানার ওসি রইস উদ্দিন বলেন, ওই ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
একের পর এক হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম আজকের পত্রিকাকে জানান, বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ড জমিজমার বিরোধ নিয়ে ঘটছে। তাঁরা সালিসে বসে মারামারির একপর্যায়ে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তারপরেই মারা যাচ্ছেন। পুলিশ সুপার বলেন, ‘পুলিশ আগে থেকে তো এ ঘটনাগুলোর খবর রাখে না। ঘটনা ঘটার পরেই পুলিশ জানতে পেরে ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই মারামারি হয়ে আহত হয়ে পড়েন। এখানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কোনো মানেই আসে না। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি কেউ যেন আইন হাতে না তুলে নেয়। আর কেউ তুললে আমরা সেটার ব্যবস্থা নিচ্ছি।’