সংকেত বাতি চালু হলেও ভরসা হাতের ইশারা


রাজধানীর সাতটি মোড়ে গতকাল রোববার পরীক্ষামূলকভাবে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ট্রাফিক সিগন্যাল (সংকেত) বাতির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে যানবাহনের চালক ও পথচারীরা সচেতনতার অভাবে নতুন সংকেত না মানায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের হাতের ইশারায় সংকেত দিতে হয়েছে।
হাইকোর্ট মোড় থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২২টি মোড়ে দেশীয় প্রযুক্তির ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গতকাল প্রথম ধাপে সাতটি মোড়ে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয়। সাতটি মোড় হলো ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল, বাংলামোটর, সোনারগাঁও, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে ও জাহাঙ্গীর গেট মোড়।
অন্তর্বর্তী সরকার গত বছরের অক্টোবরে তাৎক্ষণিক উদ্যোগ হিসেবে এই প্রকল্প নেয়। এর আগে রাজধানীতে ট্রাফিক সিগন্যাল বসানো হলেও রক্ষণাবেক্ষণ, প্রযুক্তিগত ত্রুটি ও সচেতনতার অভাবে তা ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধুনিক সংকেত ব্যবস্থা সময়ের দাবি হলেও সফলতা নির্ভর করবে জনসচেতনতা ও আইন প্রয়োগের ওপর।
গতকাল ট্রাফিক সংকেতবাতি চালু হওয়া সাতটি মোড় ঘুরে দেখা যায়, সংকেত অনেক চালক মানছেন না। পথচারীরাও যত্রতত্র রাস্তা পার হচ্ছেন। ফলে বাধ্য হয়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা সিগন্যালের পাশাপাশি হাত উঁচিয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছেন।
ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণকক্ষে থাকা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রতিনিধিরা জানান, পরীক্ষামূলকভাবে কোথাও সিগন্যাল স্বয়ংক্রিয়, কোথাও ম্যানুয়াল চালানো হচ্ছে। অটোমেটিক সিস্টেমে আগের সার্ভে অনুযায়ী লেনভিত্তিক সময় নির্ধারণ করা আছে। যেখানে অটোমেটিক চলছে না, সেখানে যানবাহনের চাপ দেখে ম্যানুয়াল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সোনারগাঁও হোটেল মোড়ে নিয়ম ভাঙা ঠেকাতে মাইকিং করে পথচারীদের ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করতে আহ্বান জানাতে দেখা যায়। তবু অনেকে নিচ দিয়েই ব্যস্ত সড়কটি পার হয়েছেন।
যাত্রাবাড়ী-মিরপুর রুটের শিকড় পরিবহনের বাসের চালক হোসেন আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিদেশে হয়তো এটা সম্ভব। কিন্তু আমাদের দেশে কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কোথাও পাঁচ মিনিট ধরে লাল বাতি, কোথাও এক মিনিট—আমরা বুঝতে পারছি না।’
এই উদ্যোগকে অনেক যাত্রী স্বাগত জানিয়েছেন। ফার্মগেটে যাত্রী আমজাদ হোসেন বলেন, সবাই নিয়ম মেনে চললে যানজট অনেকটা কমে যাবে। তবে সবার সচেতন হতে হবে। ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল মোড়ে যাত্রী সোনিয়া আক্তার বলেন, সিগন্যাল বাতি ভালো উদ্যোগ, কিন্তু মানুষ মানছে না। পুলিশ কড়া হলে তবেই কাজ হবে।
বাংলামোটর মোড়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘এটা একেবারে নতুন উদ্যোগ। মানুষ এখনো অভ্যস্ত নয়, তাই অনেকে মানছে না। আমরা চেষ্টা করছি সবাইকে সচেতন করতে। চাইছি হাতের নির্দেশনা নয়, সিগন্যালেই যান চলুক। তবে যেহেতু পরীক্ষামূলক চলছে, অটোমেটিক সিগন্যালের সময় নির্ধারণে কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যানবাহনের চাপ অনুযায়ী সময় সমন্বয় করা হবে।’
ডিটিসিএ জানিয়েছে, পরীক্ষামূলক কার্যক্রম থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে পরে ২২টি মোড়েই ট্রাফিক সিগন্যাল চালু করা হবে।
ক্রাইম জোন ২৪