সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তিতে প্রথম কোয়ান্টাম কম্পিউটার বানাল জাপান


জাপান প্রথমবারের মতো দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত কোয়ান্টাম কম্পিউটার চালু করেছে। এটি এখন ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ান্টাম ইনফরমেশন ও কোয়ান্টাম বায়োলজি সেন্টার (QIQB) থেকে বিভিন্ন ধরনের কাজ করার জন্য প্রস্তুত।
জাপানিরা জানিয়েছে, ২৮ জুলাই থেকে চালু হওয়া এই নতুন সিস্টেম পূর্বের সব ধরনের আমদানি করা অংশকে বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া এটি চালাবে জাপানের তৈরি একটি ওপেন-সোর্স সফটওয়্যার, যার নাম ‘ওপেন কোয়ান্টাম টুলচেইন ফর অপারেটরস অ্যান্ড ইউজারস’ (OQTOPUS বা অক্টোপাস)।
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মস্তিষ্ক হিসেবে ব্যবহৃত কোয়ান্টাম চিপটি তৈরি হয়েছে সুপারকন্ডাক্টিং কিউবিট দিয়ে। এর ফলে শূন্য তাপমাত্রার কাছাকাছি (মাইনাস ২৭৩ দশমিক ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) অতি ঠান্ডা পরিবেশে এই চিপের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ কোনো বাধা ছাড়াই প্রবাহিত হতে পারে।
এই কোয়ান্টাম প্রসেসিং ইউনিট (কিউপিইউ) তৈরি করেছে জাপানের গবেষণা প্রতিষ্ঠান রাইকেন (RIKEN)।
কম্পিউটারটির নাম রাখা হয়েছে ‘শ্যান্ডেলিয়ার’। এর মূল অংশগুলোতে রয়েছে—চিপ প্যাকেজ ম্যাগনেটিক শিল্ড, ইনফ্রারেড ফিল্টার, ব্যান্ডপাস ফিল্টার, লো-নয়েজ অ্যাম্পলিফায়ার এবং নানা ধরনের ক্যাবল।
এসব উপকরণ রাখা হয়েছে একটি বিশেষ ধরনের ক্রায়োজেনিক ডিভাইস ডাইলিউশন রেফ্রিজারেটরে, যা খুব কম তাপমাত্রায় উপাদানগুলো ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি আছে পালস টিউব রেফ্রিজারেটর, কন্ট্রোলার এবং লো-নয়েজ পাওয়ার সাপ্লাই।
অক্টোপাস সফটওয়্যারটি একটি ওপেন-সোর্স টুলসের সংকলন, যার মাধ্যমে কোয়ান্টাম প্রোগ্রাম চালানো হয়। এতে রয়েছে কোর ইঞ্জিন, ক্লাউড মডিউল এবং গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস (জিইউআই)। এটি মূলত কিউপিইউ এবং কোয়ান্টাম কন্ট্রোল হার্ডওয়্যারের ওপর তৈরি করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
কম্পিউটিংয়ের নতুন যুগ
বিশ্বের দ্রুততম সুপারকম্পিউটারকেও ছাপিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং। জটিল হিসেব-নিকাশ এবং সিমুলেশন সম্পাদনে আজকের প্রযুক্তির চেয়ে অনেক বেশি অগ্রগামী হতে পারে এটি। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, ওষুধ আবিষ্কার, শহরের যানজট কমানো এবং লজিস্টিক কোম্পানির জন্য সেরা ডেলিভারি রুট নির্ধারণসহ অনেক ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম কম্পিউটার কার্যকর হবে।
কারণ এটি একের পর এক ক্রমানুসারে না গিয়ে একই সময়ে অনেকগুলো হিসাব একসঙ্গে করতে পারে, যা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অদ্ভুত নিয়মের ওপর নির্ভরশীল। কোয়ান্টাম সিস্টেমে যত বেশি কিউবিট (কোয়ান্টাম কম্পিউটারের প্রাথমিক একক) যোগ করা হবে, সিস্টেম তত শক্তিশালী হবে।
তবে, কিউবিট বাড়ানো কঠিন, কারণ হিসাব করার সময় ভুলের হার অনেক বেশি থাকে। তাই এখনকার গবেষণা মূলত কোয়ান্টাম এরর কারেকশন (কিউইসি) নিয়ে।
জাপানের প্রথম দেশীয় কোয়ান্টাম কম্পিউটারটি আগস্টের মাঝামাঝি ওসাকায় অনুষ্ঠিত এক্সপো ২০২৫-এ প্রদর্শিত হয়। আয়োজকেরা কম্পিউটারের মূল উপাদানগুলো তুলে ধরেন। দর্শনার্থীরা অনলাইনের মাধ্যমে সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সহজ কোয়ান্টাম প্রোগ্রাম চালাতে পারেন।
তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স
ক্রাইম জোন ২৪