শিরোনাম

চলন্ত বাসে হাত-পা বেঁধে কুবি ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা, মহাসড়ক অবরোধ

চলন্ত বাসে হাত-পা বেঁধে কুবি ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা, মহাসড়ক অবরোধ

চলন্ত বাসে হাত-পা বেঁধে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করে অজামিনযোগ্য কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আজ শুক্রবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার পদুয়ার বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

দণ্ডিতরা হলেন মো. হোসেন আলী (২৫) ও মো. আলী হোসেন (২৩)। আর তাঁদের ভাষ্যমতে, পলাতক তিনজন হলেন পিচ্চি রাসেল, নূর আলম, সৌরভ এবং বাসচালক মো. চাঁন মিয়া।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন বলেন, ‘গ্রেপ্তার দুজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অভিযুক্ত বাকি তিনজনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে। আশা করি, পুলিশ প্রশাসনের কোনো গাফিলতি থাকবে না।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার (২২ আগস্ট) সকাল ৯টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে কোটবাড়ী বিশ্বরোড থেকে সেন্ট মার্টিন (ঢাকা মেট্রো-ব ১৫৭১৬৬) বাসে ওঠেন ভুক্তভোগী। বাসটি পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড থেকে ইউ টার্ন নেওয়ার কথা থাকলেও না নিয়ে সেটি চৌদ্দগ্রামের দিকে চলে যায়।

এরপর সুয়াগাজীতে গিয়ে ইউ টার্ন নিয়ে পুনরায় পদুয়ার বাজার আসে। তখন বাসে ছিলেন বাসচালক, তাঁর সহকারীসহ (হেলপার) আরও তিনজন। এ সময় তাঁরা ভুক্তভোগীর গলায় ছুরি ধরে গয়না, টাকাপয়সা নিয়ে নেন এবং ধর্ষণের চেষ্টা করেন।

জোরাজুরির একপর্যায়ে ভুক্তভোগীর হাতে কামড় দেন আসামিরা। এরপর হাত-পা বেঁধে বাস থেকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করলে ভুক্তভোগীর অনুরোধে ফেলে না দিয়ে পদুয়ার বাজারের একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে আসেন।

সেখানে বিষয়টি টের পেয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে খবর দিলে শিক্ষার্থীরা গিয়ে ভুক্তভোগীকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার এবং বাসে থাকা দুজনকে আটক করেন। অপর তিনজন পালিয়ে যান।

শিক্ষার্থীরা ৯৯৯ ফোন দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছায়। শিক্ষার্থীরা বাসমালিক এবং অভিযুক্ত দুজনকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসার দাবি জানান। এতে পুলিশ অস্বীকৃতি জানালে দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়।

পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা আলোচনায় বসলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযুক্তদের দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। বাকিদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণচেষ্টার মামলা করবে বলে নিশ্চিত করেন। ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা সেন্ট মার্টিন পরিবহনের দুটি বাস জব্দ করে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসেন।

এ বিষয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবাইয়া খানম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এসেই আমি প্রস্তাব দিয়েছিলাম মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দেওয়া বিষয়ে। শিক্ষার্থীরা শুরুতে আমার কথায় কর্ণপাত করেনি। অবশেষে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি মেনে নিয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের থেকে খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে দ্রুতই চলে আসি। এসে দেখি পরিস্থিতি উত্তপ্ত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সেনাবাহিনী এসেও হিমশিম খাচ্ছে। অবশেষে একটা সুরাহা হয়েছে। অভিযুক্তদের দুই বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আমি ধর্ষণের পক্ষে নই, আমি চাই এর অভিযুক্তরা শাস্তি পাক।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, ‘আমাদের একজন নারী শিক্ষার্থীদের হাত-পা বেঁধে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে এবং বাস থেকে ফেলে দিয়ে মধ্যযুগীয় নির্যাতন করেছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দুজন ধরা পড়েছে, তারা পুলিশের কাছে আছে এবং পুলিশ প্রশাসন কথা দিয়েছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাকি তিনজনে গ্রেপ্তার করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আছেন। তিনি অপরাধীদের দুই বছরের অজামিনযোগ্য জেল দিয়েছেন এবং পুলিশ ঘোষণা দিয়েছে তারা এক মাসের মধ্যে চার্জশিট দেবে, যাতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়।’


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button