শিরোনাম

রাসুল (সা.)-এর জীবনে দুঃখের বছর

রাসুল (সা.)-এর জীবনে দুঃখের বছর

মানবজীবনে সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না এক চিরন্তন সত্য। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনও এর ব্যতিক্রম ছিল না। তাঁর পবিত্র ঠোঁটে যেমন ফুটেছিল হাসি, তেমনই তাঁর চোখ থেকে ঝরেছে অশ্রু। হিজরতের দশম বছর, মহানবী (সা.)-এর জীবনে এমন এক কঠিন অধ্যায় এসেছিল, যা ইতিহাসে ‘আমুল হুজুন’ বা ‘দুঃখের বছর’ হিসেবে পরিচিত। এই এক বছরে তিনি হারিয়েছিলেন তাঁর জীবনের দুই শ্রেষ্ঠ অবলম্বনকে, যা তাঁর সুরক্ষা এবং মানসিক শক্তিকে একযোগে ভেঙে দিয়েছিল।

চাচা আবু তালিবের বিদায়

দাদা আবদুল মুত্তালিবের ইন্তেকালের পর চাচা আবু তালিবের কাছেই বেড়ে উঠেছিলেন মুহাম্মদ (সা.)। তিনি শুধু একজন অভিভাবকই ছিলেন না, বরং কুরাইশদের শত অত্যাচার থেকে রাসুল (সা.)-কে রক্ষা করার এক দুর্ভেদ্য ঢাল ছিলেন। যখন কুরাইশরা ইসলামের প্রচার বন্ধ করতে বনু হাশিমকে অবরোধ করে, তখন বৃদ্ধ আবু তালিব তাঁর গোত্রের প্রধান হিসেবে শেষ পর্যন্ত রাসুল (সা.)-এর পাশে ছিলেন।

অবরোধের কঠিন দিনগুলো তাঁর স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। ৮০ বছর বয়সে যখন তিনি ইন্তেকাল করেন, তখন রাসুল (সা.)-এর হৃদয় শোকে ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। তিনি চাচাকে সম্মান জানিয়ে বলেন, ‘হে চাচা, আপনি আমাকে শৈশবে প্রতিপালন করেছেন, এতিম হিসেবে আমার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এবং বড় হওয়ার পর সাহায্য করেছেন। আল্লাহ আপনাকে আমার পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান দিন।’ আবু তালিবের মৃত্যুর পর কুরাইশরা রাসুল (সা.)-এর ওপর এমন নির্যাতন শুরু করে, যা করার সাহস তারা আগে কখনো করেনি।

প্রিয়তমা খাদিজা (রা.)-এর প্রয়াণ

চাচা আবু তালিবের ইন্তেকালের কিছুদিন পরেই রাসুল (সা.) হারালেন তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজা (রা.)-কে। ২৫ বছর বয়সে রাসুল (সা.) তাঁকে বিয়ে করেছিলেন এবং ইন্তেকালের সময় খাদিজা (রা.)-এর বয়স ছিল ৬৫ বছর। তিনি ছিলেন প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী এবং রাসুল (সা.)-এর সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। দুঃখ-কষ্টে খাদিজা (রা.) তাঁকে সান্ত্বনা দিতেন, বিপদে সাহস জোগাতেন। ইসলাম প্রচারে তাঁর পাশে থেকে তিনি নিজের সমস্ত সম্পদ ব্যয় করেছিলেন।

রাসুল (সা.) আজীবন খাদিজা (রা.)-এর প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। হজরত আয়েশা (রা.) একবার ঈর্ষা প্রকাশ করলে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম, তিনি আমাকে তাঁর (খাদিজার) চেয়ে উত্তম কাউকে দেননি। কেননা যখন মানুষ আমাকে অস্বীকার করেছিল, তখন সে আমাকে সত্য বলে মেনে নিয়েছিল।’ খাদিজা (রা.)-এর মৃত্যু মহানবী (সা.)-এর জন্য ছিল এক অপূরণীয় ক্ষতি, যা তাঁকে মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছিল।

শোক ও অত্যাচারের দ্বিগুণ ভার

এই দুজন মহান মানুষকে হারানোর পর রাসুল (সা.) যেমন ব্যক্তিগত শোকে কাতর ছিলেন, তেমনই কুরাইশদের অত্যাচার কয়েক গুণ বেড়ে যায়। ঢালস্বরূপ আবু তালিব না থাকায় কাফিররা প্রকাশ্যে তাঁকে কষ্ট দিতে শুরু করে। পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে তিনি নতুন আশ্রয় ও সমর্থন খুঁজতে তায়েফে যান, কিন্তু সেখানেও তাঁর ওপর নির্মম অত্যাচার চালানো হয়।

এ দুটি দুর্ঘটনা এবং এর পরবর্তী নিদারুণ পরিস্থিতি এতটা পীড়াদায়ক ছিল যে রাসুল (সা.) ওই বছরটিকে ‘আমুল হুজুন’ বা দুঃখের বছর হিসেবে নামকরণ করেন। এই কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়েও তিনি ধৈর্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন, যা প্রত্যে মুমিনের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button