সৎ ব্যবসায়ীর মূলধন ইমান ও আখিরাত


জীবিকা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম ব্যবসা-বাণিজ্য। ইসলামে ব্যবসা এক মর্যাদাপূর্ণ পেশা। তবে এই পেশার মর্যাদা নির্ভর করে সততা ও নিষ্ঠার ওপর। আজকের দুনিয়ায় যখন লাভ ও প্রতিযোগিতার মোহে সততাকে বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে, তখন ইসলামে একজন সৎ ব্যবসায়ীর জন্য রয়েছে এক অনন্য সুসংবাদ। কিয়ামতের সেই ভয়াবহ দিনে, যখন সূর্যের প্রখর তাপে মানবজাতি দিশেহারা হয়ে যাবে, তখন কিছু সৌভাগ্যবান মানুষ আল্লাহর আরশের ছায়ায় আশ্রয় পাবেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হবেন সেই ব্যবসায়ী, যিনি তাঁর প্রতিটি লেনদেনে সততা ও আমানতদারিকে অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
ব্যবসা-বাণিজ্যে মিথ্যা বরকত নষ্ট করে
সততা হলো একজন মুমিনের ইমানের পরিচয়। পক্ষান্তরে মিথ্যা হলো মুনাফিকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ব্যবসায়ে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতারণা এবং আমানতের খেয়ানত। মিথ্যা কথা বলে সাময়িক লাভ হলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর। যখন একজন ব্যবসায়ী মিথ্যার আশ্রয় নেন, তখন তাঁর ব্যবসা থেকে বরকত উঠে যায়। গ্রাহকের বিশ্বাসও হারিয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিক্রি করার সময় মিথ্যা কসম খায়, আল্লাহ তাআলা তার ব্যবসার বরকত নষ্ট করে দেন।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)।
বরকতহীন ব্যবসা হয়তো টাকার অঙ্কে বড় হতে পারে, কিন্তু সেই অর্থে শান্তি ও প্রশান্তি থাকে না। ফলে সাংসারিক জীবনে অস্থিরতা, আত্মিক শূন্যতা এবং আল্লাহর থেকে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। একজন মিথ্যাবাদী ব্যবসায়ী সাময়িক সাফল্য পেলেও আখিরাতে তার জন্য অপেক্ষা করছে কঠিন শাস্তি।
সৎ ব্যবসায়ীর সম্মান ও মর্যাদা
একজন সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ী কেবল তিনিই, যিনি বাস্তবতার বিপরীতে কোনো কথা বলেন না, খারাপ পণ্যকে আসল বলে বিক্রি করেন না এবং লেনদেনে প্রতারণার আশ্রয় নেন না। তিনি লাভ হোক বা ক্ষতি—সর্বদা স্বচ্ছ ও সত্যবাদী থাকেন। এমন একজন সৎ ব্যবসায়ীর জন্য ইসলামে উচ্চ মর্যাদা ঘোষিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়ার নিচে থাকবে।’ (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব)। শুধু তা-ই নয়, একজন সৎ ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক (সত্যবাদী) ও শহীদদের সঙ্গে থাকবেন। এই মর্যাদা আত্মার পবিত্রতা, লেনদেনে খোদাভীতি এবং প্রতিটি কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আন্তরিক ইচ্ছা থেকে অর্জিত হয়।
অতএব, যাঁরা ব্যবসার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন, তাঁদের উচিত এটিকে কেবল দুনিয়াবি লেনদেন মনে না করে একটি মহান ইবাদত হিসেবে গ্রহণ করা। প্রতিটি কাজে সততা, স্বচ্ছতা ও আমানতদারিকে নিজেদের মূলধন হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। কারণ, এই পথেই রয়েছে দুনিয়ায় বরকত এবং আখিরাতে আরশের ছায়ার নিচে আশ্রয় লাভের এক অতুলনীয় মর্যাদা। একজন সৎ ব্যবসায়ী শুধু নিজেকেই নয়, বরং পুরো সমাজকে কল্যাণের পথে চালিত করেন, আর এটাই ইসলামের মহান আদর্শ।
ক্রাইম জোন ২৪