শিরোনাম
সুরা জুমুআর তাৎপর্য, ফজিলত ও অবতীর্ণের প্রেক্ষাপটবাংলাদেশ ম্যাচে পাকিস্তানি ক্রিকেটারের রাগারাগির ঘটনা ভাইরালবাড়ির আঙিনা ও পরিত্যক্ত জমিতে বস্তায় আদা চাষ, আয় বাড়ছে কৃষকেরনেছারাবাদে কুকুরের কামড়ে আহত ৩০, হাসপাতালে নেই ভ্যাকসিনচিকিৎসাসামগ্রী রেজিস্ট্রেশনের স্বতন্ত্র নীতিমালার দাবি রি-এজেন্ট ব্যবসায়ী সমিতিরআরএসএস হলো পৃথিবীর বৃহত্তম এনজিও: নরেন্দ্র মোদিতিন বছর ফিরে ব্যর্থ সাকিব, মেজাজও হারিয়েছেন তিনিঝালকাঠিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পোস্টারসংস্কার ও বিচারের আগে নির্বাচন হলে পুরোনো সমস্যা ফিরবে: সিএনএ-কে ড. ইউনূসবিসিবি এইচপির আড়াই কোটি টাকার ক্যাম্পে প্রাপ্তি কী

জনসম্পদ আত্মসাৎ ভয়াবহ অপরাধ

জনসম্পদ আত্মসাৎ ভয়াবহ অপরাধ

জনসম্পদকে আমানত হিসেবে দেখা, এর প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং এর অপব্যবহার থেকে বিরত থাকা ইমানের অপরিহার্য অংশ। এটি একজন মুমিনের সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্যের পরিচায়ক। এই সম্পদের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ নৈতিক ও ইমানি কর্তব্য। ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে রাষ্ট্রীয় সম্পদকে জনগণের কাছে আল্লাহর দেওয়া আমানত হিসেবে দেখা হয়, যার খেয়ানতকারীকে ইহকাল ও পরকালে কঠিন জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।

জনসম্পদ সবার হক

ইসলামের মৌলিক নীতি হলো, রাষ্ট্রীয় সম্পদ কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সম্পত্তি নয়, বরং তা দেশের প্রতিটি মানুষের সমান অধিকারের বস্তু। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) এই সত্যকে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি কসম করে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই এই (রাষ্ট্রীয়) সম্পদে কেউ কারও চেয়ে বেশি হকদার নয়। আমিও কারও চেয়ে বেশি হকদার নই। এই সম্পদে সব মুসলমানের অধিকার আছে, তবে মালিকানাধীন দাস ছাড়া।’ এই ঘোষণা থেকে স্পষ্ট হয়, জনসম্পদ হলো একধরনের সমষ্টিগত মালিকানা, যার সুষ্ঠু বণ্টন ও ব্যবহার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের পবিত্র দায়িত্ব। এই সম্পদ থেকে একজন যোগ্য ব্যক্তি যাতে তার প্রাপ্য সম্মান ও অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, তার জন্য আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন আমানতগুলো হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে।’ (সুরা নিসা: ৫৮)

জনসম্পদের খেয়ানত জঘন্য পাপ

রাষ্ট্রীয় সম্পদের খেয়ানত বা আত্মসাৎ করা শুধু অর্থনৈতিক দুর্নীতি নয়, বরং এটি লাখো মানুষের অধিকার হরণের শামিল। ইসলামে এই পাপকে অত্যন্ত জঘন্য হিসেবে গণ্য করা হয়। কারণ, এটি সরাসরি ‘হক্কুল ইবাদ’ বা বান্দার হক নষ্ট করার অপরাধ। আল্লাহ তাআলা বান্দার ব্যক্তিগত পাপ ক্ষমা করলেও বান্দার হক নষ্ট করার পাপ বান্দা নিজে ক্ষমা না করলে তিনি ক্ষমা করেন না। তাই যে ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করে, সে দেশের সব মানুষের কাছে ঋণী হয়ে যায়, যার থেকে মুক্তি পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। এই পাপের মাধ্যমে সমাজে বৈষম্য, অস্থিরতা ও অনাস্থা জন্ম নেয়, যা একটি জাতির জন্য ধ্বংস ডেকে আনে। একজন শাসক বা প্রশাসক যখন জনসম্পদের রক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে খেয়ানত করেন, তখন তিনি আল্লাহর কাছেও চরম বেইমান হিসেবে গণ্য হন।

জনসম্পদ আত্মসাতের ভয়াবহ পরিণতি

জনসম্পদ আত্মসাতের পরিণাম পরকালে হবে অত্যন্ত ভয়াবহ ও লোমহর্ষক। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কোনো নবীর জন্য শোভনীয় নয় যে তিনি খেয়ানত করবেন। আর যে ব্যক্তি খেয়ানত করবে, সে কিয়ামতের দিন সেই খেয়ানত করা বস্তু নিয়ে উপস্থিত হবে। অতঃপর প্রত্যেকেই পরিপূর্ণভাবে পাবে, যা সে অর্জন করেছে। আর তাদের প্রতি কোনো অন্যায় করা হবে না।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৬১)। এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, কেয়ামতের দিন প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের জন্য ব্যক্তিগতভাবে জবাবদিহি করতে হবে এবং আত্মসাৎকৃত সম্পদকে কাঁধে বহন করে আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে।

হাদিসের বর্ণনায় এই পরিণতি আরও পরিষ্কার হয়ে ওঠে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কিছু মানুষ আল্লাহর দেওয়া সম্পদ অন্যায়ভাবে ব্যয় করে, কিয়ামতের দিন তাদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত।’ (সহিহ্ বুখারি: ৩১১৮)। আরেকটি হাদিসে তিনি আত্মসাৎকারীদের শাস্তির এক মর্মান্তিক চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘যাঁর হাতে আমার প্রাণ, সেই সত্তার কসম, সদকার মাল থেকে স্বল্প পরিমাণও যে আত্মসাৎ করবে, সে তা কাঁধে করে কেয়ামতের দিন উপস্থিত হবে। সেটা উট হলে তার আওয়াজ করবে, গাভি হলে হাম্বা হাম্বা করবে আর বকরি হলে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করতে থাকবে।’ এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, রাষ্ট্রীয় সম্পদের খেয়ানত আল্লাহ কত কঠিন অপরাধ হিসেবে দেখেন।

এক সূক্ষ্ম খেয়ানত

রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের সময় কোনো ব্যক্তি সামান্য উপহার বা হাদিয়া গ্রহণ করলেও তা ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে এক সূক্ষ্ম খেয়ানত। এর কারণ হলো, এই উপহার তার ব্যক্তিগত যোগ্যতা বা গুণের জন্য নয়, বরং তার পদ ও ক্ষমতার কারণে দেওয়া হয়। এই হাদিয়া এক প্রকারের ঘুষ; যা দিয়ে প্রভাব বিস্তার বা পক্ষপাতিত্বের চেষ্টা করা হয়। রাসুল (সা.)-এর যুগের একটি ঘটনা এ ক্ষেত্রে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের সময় কোনো ব্যক্তি সামান্য উপহার বা হাদিয়া গ্রহণ করলেও তা ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে এক সূক্ষ্ম খেয়ানত।

আবু হুমাইদ সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) সদকা সংগ্রহের কাজে ইবনে উতবিয়া নামক এক ব্যক্তিকে নিযুক্ত করেন। সে কাজ শেষে ফিরে এসে কিছু সম্পদ দেখিয়ে বলল, ‘এগুলো আপনাদের, আর এগুলো আমাকে হাদিয়া দেওয়া হয়েছে।’ রাসুল (সা.) তখন তার এ কথায় ভীষণ ক্রোধান্বিত হয়ে বলেন, ‘সে তার বাবার ঘরে কিংবা তার মায়ের ঘরে বসে থাকল না কেন? তখন সে দেখতে পেত, তাকে কেউ হাদিয়া দেয় কি না।’

এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়, কোনো সরকারি বা জনপদে অধিষ্ঠিত থাকার কারণে প্রাপ্ত যেকোনো উপহারকে প্রত্যাখ্যান করা আবশ্যক। অন্যথায় তা দুর্নীতির পথ খুলে দেয় এবং একজন যোগ্য ও সৎ ব্যক্তি তার প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত হয়। রাসুল (সা.)-এর এই উক্তি প্রত্যেক দায়িত্বশীল ব্যক্তির জন্য এক কঠিন সতর্কবার্তা।


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button