আরব আমিরাতে বন্দী ২৬ বাংলাদেশির মুক্তির দাবি এনসিপি ডায়াস্পোরার


গত বছর বাংলাদেশে চলমান জুলাই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে আটক ২৬ জন প্রবাসী বাংলাদেশিকে দ্রুত মুক্তি ও দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্স।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন এনসিপি ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্সের গ্লোবাল কো-অর্ডিনেটর তারিক আদনান মুন।
তারিক আদনান মুন বলেন, সহিদুল আলম, মন্সুর আহমেদ, নুর হাসান— এই নামগুলো কেবল পরিসংখ্যান নয়, বরং এক একটি পরিবারের যন্ত্রণার গল্প। তাঁদের অপরাধ কেবল একটাই—এই ২৬ জন প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক গত বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশের গণ-আন্দোলনের সময় সংহতি জানিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে একটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অপরাধের অভিযোগ নেই।
তিনি বলেন, ‘তবুও তাঁরা দীর্ঘ ৮–৯ মাস ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন বন্দিশালায় আটক রয়েছেন। আমাদের কাছে অভিযোগ আছে যে, বাংলাদেশ দূতাবাসের সরবরাহ করা তথ্যের ভিত্তিতেই তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
মুন বলেন, ‘আমরা মনে করি, এটি একটি অগ্রহণযোগ্য ঘটনা—এটি একটি গণতান্ত্রিক দেশের প্রবাসী নাগরিকদের মতপ্রকাশের অধিকার হরণ এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। দেশের নাগরিকদের রক্ষার পরিবর্তে দূতাবাস তাঁদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে—যা আমাদের সংবিধান, আন্তর্জাতিক আইন ও কূটনৈতিক দায়িত্বের পরিপন্থী।’
এ সময় তিনি আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অবিলম্বে প্রত্যাহার করে একটি কনস্যুলার যোগাযোগ চ্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে কূটনৈতিক ও আইনি উদ্যোগে তাঁদের মুক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘এই ২৬ জন মানুষ কারাবন্দী থাকায় তাঁদের পরিবার বাংলাদেশে চরম দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছে—আর্থিক সংকট, মানসিক দুশ্চিন্তা, সন্তানদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এই ২৬ জন শুধু নাম নয়, তাঁরা প্রত্যেকে কোনো না কোনো পরিবারের একমাত্র ভরসা। তাঁদের মুক্তি এখন সময়ের দাবি নয়, বরং রাষ্ট্রের একটি নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব। আমরা আশা করি, রাষ্ট্র দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে এই সংকটের সমাধান করবে।’
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরব আমিরাতে আটক বাংলাদেশি নাগরিকদের দ্রুত মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সরকারকে অতি দ্রুত ওই দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বাংলাদেশের কূটনৈতিক চ্যানেলের গাফিলতির সমালোচনা করে বলেন, ‘আমাদের কূটনৈতিক চ্যানেলে আমরা গাফিলতি দেখতে পাচ্ছি। পররাষ্ট্র, প্রবাসীকল্যাণ ও স্বরাষ্ট্র—এই তিন মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে সেখানকার কাউন্সিলর অফিসের মাধ্যমে চ্যানেল তৈরি করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তারা কেন গড়িমসি করছে?’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যখন সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে মানুষের যন্ত্রণা ও বেদনা প্রকাশ করে কোনো দাবি উত্থাপন করা হয়, তখন সরকার কানে তুলা দিয়ে ঘুমায়।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও বলেন, ‘গত বছরের এই দিনে আমরা একটি গণ-অভ্যুত্থানের দ্বারপ্রান্তে ছিলাম, আর এই বছরের এই সময়ে আমাদের ভাইয়েরা জেলে।’