দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় প্রথম ৫০-এ নেই ঢাকা


বর্ষাকালের শুরু থেকেই ঢাকার বাতাসে দূষণ সহনীয় পর্যায়েই থাকছে। দু-একদিন বাড়লেও বেশির ভাগ দিনই সহনীয় মাত্রায় থাকছে রাজধানী শহরের বাতাস। মাঝে মাঝে আবার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশগুলোর কিছু শহরের চেয়েও বিশুদ্ধও থাকছে।
গত কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় আজ সোমবারও ঢাকার বাতাস সহনীয়। গতকালের তুলনায় আজ ঢাকার বায়ুমানে বেশ উন্নতিও লক্ষ্য করা গেছে। বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান ৫৭, যা সহনীয় পর্যায়ের বাতাসের নির্দেশক। আইকিউএয়ারের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের করা দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় আজ ঢাকার অবস্থান ৫৪তম।
গতকাল রোববার ৮৯ বায়ুমান নিয়ে বায়ুদূষণের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ছিল ২৩তম।
আজ বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষে আছে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর কিনশাসা। গত কয়েকমাস ধরে প্রায়শই এ তালিকায় শীর্ষে থাকছে শহরটি। শহরটির বায়ুমান আজ ১৮৫, যা অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।
আজ দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো— কানাডার টরোন্টো, বাহরাইনের মানামা, কানাডার মন্ট্রিওল ও উগান্ডার কাম্পালা। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে—১৫৬, ১৫৫, ১৫২ ও ১৪২।
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ-এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।