ঈশ্বরগঞ্জের মাঠে ফুটবলের স্বপ্ন বুনছেন যুব সাফজয়ী অধিনায়ক আসিফ


ছুটি পেলেই বাড়ি ফিরেই ছুটে যান মাঠে। সেখানে আসিফের অপেক্ষায় থাকে গ্রামের এক ঝাঁক কিশোর ফুটবলার। অনূর্ধ্ব-২০ সাফ চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক আশরাফুল হক আসিফ এখন তাঁদের স্বপ্নের ও অনুপ্রেরণার নাম। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার দত্তপাড়া গ্রামে বেড়ে ওঠা আসিফের। ২০২৪ সালে তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ জাতীয় ফুটবল দল প্রথমবারের মতো সাফ শিরোপা ঘরে তোলে। ফাইনালে নেপালকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে দলটি।
বয়স ভিত্তিক ফুটবলে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপালেও শিকড় ভুলে যাননি আসিফ। স্থানীয় সেই খেলার মাঠ আর ভবিষ্যতের ফুটবলপ্রেমী তরুণদের নিয়েই কাটে তাঁর ছুটির ব্যস্ততা। নিজে উপস্থিত থেকে অনুশীলন করান উঠতি ফুটবলারদের। শেখান পাসিং, ড্রিবলিং, গোলের কৌশল—শৃঙ্খলা আর স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা। গত বৃহস্পতিবার ঝুম বৃষ্টির মধ্যেও স্থানীয় খেলার মাঠে আসিফের অনুশীলন করাতে দেখা যায় আসিফকে।
তাঁর অনুশীলনে নিয়মিত ৪০ থেকে ৫০ জনের উপস্থিতি থাকলেও এদিন বৃষ্টির কারণে উপস্থিতির সংখ্যা কম ছিল। এ সময় কথা হলে আসিফ বলেন, ‘আমার ফুটবল খেলার শুরু এই মাঠ থেকেই। এই মাঠে খেলেই আমার বেড়ে ওঠা। আমি চাই, ঈশ্বরগঞ্জ থেকেও যেন জাতীয় দলে খেলোয়াড় উঠে আসে। তাই চেষ্টা করি এলাকার উদীয়মান ফুটবলারদের পাশে দাঁড়াতে। তাদের জন্য কিছু করতে পারলে সেটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মনে হয়।’
বিকেল হওয়ার আগেই প্রতিদিন মাঠে ভিড় করেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নসহ আশপাশের অন্যান্য এলাকা থেকে আসা কিশোর ফুটবলাররা। কারও হাতে পুরোনো বুট, কারও পায়ে ছেঁড়া মোজা। কিন্তু চোখেমুখে জ্বলজ্বল করে একটাই স্বপ্ন—আসিফের মতো হয়ে একদিন জাতীয় দলে খেলা।
আসিফের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত অনুশীলন করা ১৩ বছর বয়সী সৌরভের স্বপ্ন একদিন আসিফের মতোই ফুটবলার হওয়া। বলেন, ‘আমি প্রতিদিন ১৫ কিলোমিটার দূর থেকে আসি এখানে অনুশীলনের জন্য। আসিফ ভাই আমাদের মাঠে অনুশীলন করান—এটাই আমাদের জন্য অনেক বড় ব্যাপার। উনি জাতীয় দলে খেলেন, আমাদের মতো গ্রাম থেকে এসেই সব করেছেন। ওনার মতো একদিন আমরাও খেলতে চাই দেশের হয়ে।’
আরেক ফুটবলার হৃদয়ের মুখেও একই কথা, ‘আসিফ ভাই শুধু খেলা শেখান না, স্বপ্ন দেখাতেও শেখান। ওনার মতো খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন দেখি আমরা সবাই। আসিফ ছুটিতে বাড়ি ফিরলেই যেন প্রাণ ফিরে পায় পৌর এলাকার স্থানীয় মাঠটি। শুধু ঈশ্বরগঞ্জই নয়, সারা দেশের উদীয়মান ফুটবলারদের কাছেই এখন আয়কন হয়ে উঠেছেন আশরাফুল হক আসিফ।’
উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য ও আসিফের বড় ভাই আরিফুল হক বলেন, ‘আসিফ না থাকলেও আমি মাঠে থাকি, যেন ছেলেগুলোর আগ্রহে ভাটা না পড়ে। এই মাঠই তো ওর শুরু—এখন সে জাতীয় অনূর্ধ্ব-২৩ দলে ডাক পেয়েছে। আশা করি ওখানেও সে ভালো করবে।’