শিরোনাম

শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে জাবির ইউআরপি বিভাগের পরীক্ষা হচ্ছে না

শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে জাবির ইউআরপি বিভাগের পরীক্ষা হচ্ছে না

শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ক্লাস শেষ হওয়ার তিন মাস পার হলেও পরীক্ষা শুরু হচ্ছে না জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের (ইউআরপি) স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত পর্বের (ফাইনাল সেমিস্টার) শিক্ষার্থীদের। কবে পরীক্ষা শুরু হবে সে বিষয়েও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানেন না শিক্ষার্থীরা।

বিভাগটির ৪৮তম ব্যাচের কয়েক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত পর্বের ক্লাস ও টিউটোরিয়াল পরীক্ষা শেষ হয় চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল। তিন মাস আগে ক্লাস শেষ হলেও এখনো পর্যন্ত পরীক্ষা শুরু করেনি বিভাগটি।

শিক্ষার্থীরা জানান, বিভাগের তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৪৯তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থীর দেওয়া একটি অভিযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষকদের একটি অংশ বিভাগের বর্তমান সভাপতিকে চাপে রাখতে কোনো পরীক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন না। ফলে তাঁদের পরীক্ষাগুলো আটকে রয়েছে।

ইউআরপি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ওই বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. সাজিদ ইকবালকে থিসিসে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পরীক্ষক অধ্যাপক শফিক-উর-রহমান এবং সহযোগী অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান উদ্দেশ্যমূলকভাবে কম নম্বর দিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। এ ছাড়া সাজিদের থিসিস মূল্যায়নে ওই দুজন শিক্ষক নির্বাচনে সহযোগী অধ্যাপক আফসানা হক প্রভাবিত করেন এবং তিনি প্রশ্ন ফাঁস করেছেন দাবি করে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে একদল শিক্ষার্থী প্রথমে আফসানা হকের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে বিভাগে তালা ঝুলিয়ে দেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে। এ ঘটনার জেরে বিভাগের শিক্ষকদের একটি গ্রুপ পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করছে না।

এ বিষয়ে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক কাসফিয়া নাহরিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, পরীক্ষা শুরু করার জন্য পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সবার কাছ থেকে প্রশ্নপত্র পাওয়া গেলে তাঁরা পরীক্ষার আয়োজন করবেন।

প্রশ্নপত্র সব শিক্ষক জমা দিয়েছেন কি না এবং সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি প্রশ্ন পুনরায় চেয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আমার যতটুকু দায়িত্ব, তা পালন করেছি।’ পরীক্ষার রুটিন তৈরি করা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সময় হলে আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে রুটিন তৈরি করব।’

৪৮তম ব্যাচের চূড়ান্ত পর্বে (ফাইনাল সেমিস্টার) মোট ৫টি কোর্স রয়েছে। এর মধ্যে অধ্যাপক শফিক-উর-রহমান ও হালিমা বেগম প্রশ্নপত্র জমা দেননি বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে স্নাতকোত্তরের একটি কোর্সের শিক্ষক অধ্যাপক মো. শফিক-উর-রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বিভাগের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরীক্ষা-সংক্রান্ত অতি গোপনীয় বিষয় ফাঁসের সন্দেহ বা অভিযোগ নিয়ে বিভাগের দুই থেকে তিনজন শিক্ষক ছাড়া অধিকাংশ শিক্ষক পরীক্ষা-সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করছেন না। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর বিষয়টির সমাধান হলে তারপর হয়তো তাঁরা কাজ শুরু করবেন।’

কোর্স শিক্ষক হিসেবে তিনি পরীক্ষা কমিটির কাছে প্রশ্নপত্র জমা দিয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এটা খুবই কনফিডেনসিয়াল বিষয়। আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আনিসা নূরী কাঁকন বলেন, ‘পরীক্ষার আয়োজন করার দায়িত্ব পরীক্ষা কমিটির। এখানে বিভাগের সভাপতির সে রকম কিছু করার থাকে না। তবুও শিক্ষার্থীরা যখন আমার কাছে পরীক্ষা আয়োজনের আবেদন জানিয়েছে, আমি সঙ্গে সঙ্গেই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে কথা বলেছি। পরীক্ষা কমিটির সভাপতিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দিয়েছি; কিন্তু আমি কোনো রেসপন্স পাইনি।’

অধ্যাপক আনিসা নূরী আরও বলেন, ‘আমি যখন পরীক্ষা কমিটির কাছ থেকে রেসপন্স পাচ্ছি না, তখন আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আমি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান স্যারকে সবকিছু অবগত করেছি। এখন বিষয়টি প্রশাসন দেখবে।’



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button