রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে মতানৈক্য, ৩১ জুলাইয়ের আগেই সিদ্ধান্ত জানাবে কমিশন


সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো এখনো ঐকমত্যে পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
তিনি বলেছেন, ‘রাষ্ট্রের মূলনীতি বিষয়ে আজ চতুর্থ দিনের মতো আলোচনা হয়েছে। এই চার দিনের আলোচনায় আমরা দেখেছি, সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে বর্ণিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে যে প্রস্তাব (সাম্য ও মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি) কমিশনের পক্ষ থেকে সংশোধিতভাবে উপস্থাপিত হয়েছিল, তা কীভাবে সংবিধানে উল্লেখিত হবে, সে বিষয়ে ঐকমত্যে আসা যাচ্ছে না।’
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ রোববার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফায় ১৯তম বৈঠকের সান্ধ্যবিরতির সময় ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘বৈঠকে এক পক্ষ বিদ্যমান যে চার মূলনীতি আছে, তার সঙ্গে কমিশনের প্রস্তাব সংযুক্ত করার কথা বলেছে। কেউ কেউ কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত হওয়া ‘‘আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ রাখার কথা বলছে। কেউ কেউ কমিশনের প্রস্তাবে একমত। ফলে আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি, এ বিষয়ে ঐকমত্যে আসা যাচ্ছে না।
‘এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে কমিশন। আশা করছি, আগামী ৩১ জুলাইয়ের আগেই আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাব।’
বৈঠকে পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল ও জোটের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান তিনি।
আলী রীয়াজ বলেন, পুলিশ কমিশনের উদ্দেশ্য হবে, পুলিশ বাহিনীর পেশাদারত্ব ও প্রভাবমুক্তভাবে দায়িত্ব পালনের নিশ্চয়তা, বাহিনীর সদস্যদের উত্থাপিত অভিযোগের নিষ্পত্তি এবং নাগরিকদের পক্ষ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের নিষ্পত্তি। এই কমিশন হবে স্বাধীন, ৯ সদস্যবিশিষ্ট এবং এর কাঠামো, দায়িত্ব ও এখতিয়ার আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।
পুলিশ কমিশনের চেয়ারম্যান হবেন আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। সদস্যদের মধ্যে কমপক্ষে দুজন নারী সদস্য থাকবেন। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, পুলিশের বেআইনি কার্যকলাপের ক্ষেত্রে শাস্তির মাত্রা নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের নির্দেশ, বাহিনীর স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক বা প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষা, নাগরিক অভিযোগের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া, বেআইনি চাপের বিরুদ্ধে তদন্ত ও ব্যবস্থা, পুলিশি আইন ও বিধির সংস্কার এবং প্রয়োজনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতা কমিশনের থাকবে। কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাধ্য থাকবে।
আলী রীয়াজ জানান, আজকের বৈঠকে তৃতীয় আলোচ্য বিষয় ছিল প্রধানমন্ত্রী পদে মেয়াদের সীমা। রাজনৈতিক দলগুলো সর্বসম্মতভাবে একমত হয়েছে যে, একজন ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে।
আজকের আলোচনার শেষ বিষয় ছিল সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্ব। এ বিষয়ে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি বলে জানান আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে, বিদ্যমান ৫০টি সংরক্ষিত আসন বহাল রেখে সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণে রাজনৈতিক দলগুলো যেন অন্তত এক–চতুর্থাংশ কিংবা এক–পঞ্চমাংশ আসনে নারী প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়।