ম্যানেজারের সঙ্গে ওয়ান-অন-ওয়ান সভায় সফল হওয়ার ৫ উপায়


কর্মজীবনে শুধু কাজ করে যাওয়াই যথেষ্ট নয়। কাজের প্রভাব, উন্নয়ন এবং নেতৃত্বের প্রস্তুতি নিয়েও সচেতন থাকা উচিত। অনেকেই ম্যানেজারের সঙ্গে নিয়মিত ওয়ান-অন-ওয়ান সভাগুলোর গুরুত্ব অনুধাবন করেন না। তাঁরা এ সভাকে কেবল নিয়মিত কাজের অগ্রগতি জানানোর সুযোগ হিসেবে দেখেন। অথচ বাস্তবে এটি হতে পারে আত্মোন্নয়ন, সম্পর্ক উন্নয়ন এবং নেতৃত্ব গড়ার এক দারুণ সুযোগ। ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনা অ্যাট শার্লটের অধ্যাপক স্টিভেন রোজেলবার্গ পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় অর্ধেক কর্মী মনে করেন, ওয়ান-অন-ওয়ান সভাগুলো যথেষ্ট কার্যকর নয়। অন্যদিকে, যাঁরা এ সভাগুলো দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেন, তাঁরা ম্যানেজারের সঙ্গে মজবুত সম্পর্ক গড়ে তোলেন, মূল্যবান পরামর্শ পান এবং ক্যারিয়ার অগ্রগতির পথ সুগম করতে সক্ষম হন।
আজ থাকছে ম্যানেজারের সঙ্গে ওয়ান-অন-ওয়ান সভা আরও ফলপ্রসূ করার ৫টি কার্যকর উপায়। যেগুলো আপনার পেশাগত সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে পারে এবং ভবিষ্যতের নেতৃত্বের পথে আপনাকে এগিয়ে নেবে।
সভাটি আপনার নিয়ন্ত্রণে আনুন
বেশির ভাগ কর্মী প্রস্তুতিহীনভাবে সভায় অংশ নেন। তাঁরা আশা করেন, ম্যানেজারই হয়তো দিকনির্দেশনা দেবেন। এ মনোভাব কেবল সময় নষ্ট করে না; বরং আপনাকে নিষ্ক্রিয় কর্মী হিসেবেও উপস্থাপন করে। এ জন্য সভার আগে নিজেই একটি স্পষ্ট অ্যাজেন্ডা তৈরি করুন এবং অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে ম্যানেজারকে পাঠিয়ে দিন। আলোচনায় রাখুন আপনার কাজের চ্যালেঞ্জ, শেখার সুযোগ ও নতুন আইডিয়া। সভার শুরুতে বলুন, ‘আমি কয়েকটি বিষয় নিয়ে আপনার মতামত জানতে চাচ্ছিলাম…’ এমন স্বতঃস্ফূর্ত সূচনা আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে এবং আলোচনায় নেতৃত্ব নিতে সহায়তা করবে। এতে আপনার ম্যানেজার বুঝতে পারবে, আপনি উদ্যোগী, কৌশলগতভাবে ভাবেন এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত।
কাজের বাইরেও বলুন নিজের কথা
ওয়ান-অন-ওয়ান সভা ধীরে ধীরে কেবল নিয়মিত কাজের অগ্রগতি দেওয়ার রুটিন ইভেন্টে পরিণত হয়। অথচ এটি হতে পারে আপনার স্বপ্ন ও দক্ষতা নিয়ে গভীর আলোচনার চমৎকার সুযোগ। এ জন্য প্রতিটি সভায় অন্তত ১০ মিনিট সময় রাখুন পেশাগত উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করার জন্য। জিজ্ঞেস করুন, ‘আমার ক্যারিয়ার উন্নয়নে কী কী স্কিল গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনি মনে করেন?’ অথবা বলুন, ‘আমি একটি নতুন প্রকল্পে নেতৃত্ব নিতে আগ্রহী, যাতে আরও কিছু শেখার সুযোগ হয়।’ এর কারণ, ম্যানেজাররা চান এমন কর্মী যাঁরা শুধু কাজই করেন না, নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়েও সচেতন থাকেন। এ ধরনের আলোচনা আপনাকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং বিনিয়োগযোগ্য কর্মী হিসেবে তুলে ধরবে।
সমস্যা নয়, সমাধান নিয়ে যান
শুধু সমস্যা নিয়ে যাওয়ার বদলে ম্যানেজারের সামনে এমন সমাধান নিয়ে হাজির হন, যা বাস্তবায়নযোগ্য। এ জন্য যেকোনো চ্যালেঞ্জের সঙ্গে সঙ্গে দিন দুটি সম্ভাব্য সমাধান। উদাহরণস্বরূপ: ‘আমি লক্ষ্য করেছি ক্লায়েন্ট সাড়া দিতে আমাদের সময় বেড়ে যাচ্ছে। আমি কিছু সিস্টেম খুঁজে পেয়েছি, যা হয়তো এ বিষয়টি সমাধান করতে পারে…।’ এর কারণ ম্যানেজাররা কর্মীদের মধ্যে সেই মূল্যবান সহকর্মীকেই খোঁজেন, যাঁরা সমস্যা কমিয়ে তাঁদের কাজ সহজ করেন। আপনি যখন সমাধান নিয়ে আসেন, তখন আপনি হয়ে ওঠেন টিমের নির্ভরযোগ্য স্তম্ভ।
নির্দিষ্ট ফিডব্যাক চান এবং তা কাজে লাগান
অনেকেই ভাবেন, ‘ম্যানেজার কিছু বলেননি মানে সব ঠিকই আছে।’ কিন্তু এই নীরবতা আপনাকে উন্নতির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে। এ জন্য সরাসরি ফিডব্যাক চেয়ে নিন। যেমন ‘গত প্রেজেন্টেশনে আমি কীভাবে আরও ভালো করতে পারতাম?’ এবং পরবর্তী সময়ে সে ফিডব্যাক অনুযায়ী কীভাবে নিজেকে উন্নত করেছেন, তাও ম্যানেজারকে জানান। এ জন্য, আপনার পরবর্তী ওয়ান-অন-ওয়ান সভাটিকেই কাজে লাগান সম্পর্ক গড়ার, শেখার ও নিজের অবস্থান মজবুত করার একটি সুযোগ হিসেবে।
সম্পর্ক গড়ে তুলুন কাজের বাইরেও
শুধু অফিসের টাস্ক আর টাইমলাইন নিয়ে কথা বললে সম্পর্ক গভীর হয় না। সম্পর্ক তৈরি করতে হয় মনোযোগ দিয়ে শুনে, উৎসাহ দিয়ে ও ব্যক্তিগত মানবিক স্পর্শ দিয়ে। এ জন্য ম্যানেজারের অর্জনে অভিনন্দন জানান, তাঁদের আগ্রহ ও অভিজ্ঞতা জানতে চেয়ে প্রশ্ন করুন। বলুন, ‘আপনার জন্য এই সপ্তাহে সবচেয়ে ইতিবাচক মুহূর্তটা কী ছিল?’ কিংবা ‘আপনার যে ক্যারিয়ার টার্নিং পয়েন্টের কথা বলেছিলেন, সেটা নিয়ে আরও জানতে চাই।’ এর কারণ গভীর সম্পর্ক মানে বিশ্বাস, সহযোগিতা এবং খোলামেলা আলোচনা। একজন মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা পেশাগত বন্ধনকে করে আরও দৃঢ়।
গবেষণা বলছে, যেসব প্রতিষ্ঠান নিয়মিত ওয়ান-অন-ওয়ান সভার গুরুত্ব দেয়, সেখানে কর্মীদের সম্পৃক্ততা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায়, কমে যায় কর্মী ঘূর্ণন হার। তবে এর বাইরেও, এমন সভা আপনাকে আরও আত্মবিশ্বাসী, স্পষ্টভাষী ও ভবিষ্যৎকেন্দ্রিক কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।
সূত্র: ফর্বস