সন্তানের মৃত্যু পিতামাতার জন্য সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা


মানুষের জীবন একটি পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা। একজন মুমিনের জীবন কখনো ফুল বিছানো পথে চলে না—তা চলে প্রাপ্তি ও বিয়োগের মধ্য দিয়ে, স্বস্তি ও বেদনার ঢেউ পেরিয়ে। আল্লাহ আমাদের প্রতিটি সম্পর্ক, ভালোবাসা ও সম্পদের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন। তবে এসবের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন ও বেদনাদায়ক পরীক্ষা হলো—প্রিয় সন্তানকে হারানো।
সন্তান পিতামাতার চোখের আলো, জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। কিন্তু কখনো কখনো আল্লাহ তাআলা এই প্রিয়তম নিয়ামতটিকে ফিরিয়ে নিয়ে বান্দাকে পরীক্ষা করেন—সে কী ধৈর্য ধারণ করবে? আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততি তো পরীক্ষার বস্তু। আর আল্লাহরই নিকট রয়েছে মহাপুরস্কার।’ (সুরা তাগাবুন: ১৫)
পরীক্ষা আসবেই—কখনো সন্তান দিয়ে, কখনো জীবনের ক্ষতি দিয়ে। আল্লাহ বলেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা, এবং ধন-সম্পদ, জানপ্রাণ ও ফলফসলের ক্ষয়ক্ষতির মাধ্যমে। আর আপনি সুসংবাদ দিন ধৈর্যশীলদের।’ (সুরা বাকারা: ১৫৫)
মুমিনের জীবনে মুসিবত অবধারিত। এসব দুর্যোগ ও বিয়োগের সময় আল্লাহ বান্দার অন্তরের অবস্থা দেখেন—সে ধৈর্য ধরে কি না, আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে কি না।
বিপদের সময় প্রথম ধাক্কায় যে ধৈর্য দেখানো হয়, সেটাই প্রকৃত ধৈর্য। অনেকে পরবর্তীতে নিজেকে সামলে নেন, কিন্তু সেটা সবরের পূর্ণতা নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘বিপদের প্রথম অবস্থায়ই প্রকৃত সবর।’ (সহিহ্ বুখারি: ১৩০২)
যে মুমিন ধৈর্য ধরে আল্লাহর ইচ্ছায় নিজেকে সঁপে দেয়, তার জন্য রয়েছে অনন্য পুরস্কার। আল্লাহ বলেন, ‘আর আপনি সুসংবাদ দিন ধৈর্যশীলদের।’ (সুরা বাকারা: ১৫৫)
এই সুসংবাদ জান্নাত, আল্লাহর রহমত ও তাঁর নৈকট্যের—যা কোনো মুসিবতের চেয়ে অনেক বড় সফলতা।
সন্তান হারানো নিঃসন্দেহে মানব জীবনের সবচেয়ে বড় বেদনার পরীক্ষা। কিন্তু একজন মুমিন জানে—এই দুনিয়া চূড়ান্ত নয়, চিরস্থায়ী নয়। সন্তান আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া ছিল; তাকেই আবার ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই বেদনার মাঝেও ধৈর্য ধরে, আল্লাহর কাছে বিনীত থেকে যদি কেউ তাঁর ইবাদতে লিপ্ত থাকে—তবে সেটাই সফলতার পথ।