২০ হাজার ধারণক্ষমতার রিসোর্ট চালু করল উত্তর কোরিয়া, কিন্তু কার জন্য


উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন সম্প্রতি দেশটির পূর্ব উপকূলে ‘ওনসান-কালমা কোস্টাল টুরিস্ট জোন’ নামে একটি বিশাল সমুদ্রসৈকত রিসোর্টের উদ্বোধন করেছেন। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এটিকে ‘জাতীয় রত্ন পর্যায়ের পর্যটন শহর’ বলে অভিহিত করেছে। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে—এই রিসোর্টে আদৌ কেউ বেড়াতে যাবেন কিনা?
রোববার (২৯ জুন) সিএনএন জানিয়েছে, গত ২৪ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হওয়া কালমা রিসোর্টে রয়েছে ওয়াটারপার্ক, উঁচু হোটেল এবং প্রায় ২০ হাজার অতিথির থাকার ব্যবস্থা। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ জানিয়েছে, ১ জুলাই থেকে শুধু দেশীয় পর্যটকদের জন্যই এসব পরিষেবা চালু হবে। আর বিদেশি পর্যটকদের বিষয়ে সিদ্ধান্তের কথা এখনো কিছুই জানানো হয়নি।
সাম্প্রতিক সময়ে কিম জং উনের নেতৃত্বাধীন শাসনব্যবস্থাকে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ‘আশাহীন, দমবন্ধ পরিবেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যেখানে প্রতিদিনের জীবনসংগ্রাম খাদ্যসংকট ও মৌলিক অধিকারহীনতায় জর্জরিত। এই বাস্তবতায় এমন এক বিলাসবহুল রিসোর্ট উদ্বোধন আন্তর্জাতিক মহলে বিস্ময় ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
রিসোর্টটি দেশটির কালমা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশেই অবস্থিত। নতুন করে নির্মিত হয়েছে কালমা রেলস্টেশন। পর্যটকদের সুবিধার জন্যই এটি করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
সবকিছু মিলিয়ে প্রকল্পটি বিদেশি মুদ্রা আয়ের লক্ষ্যে গঠিত বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে এই রিসোর্ট উদ্বোধনের সময় রাশিয়ান দূতাবাস ছাড়া অন্য কোনো বিদেশি প্রতিনিধির উপস্থিতি ছিল না। পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান দূরত্বের প্রতিচ্ছবি যেন এটি।
জানা গেছে, নতুন রিসোর্টে রাশিয়ার পর্যটকদের জন্য তিনটি প্যাকেজ চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটি শুরু হবে আগামী ৭ জুলাই। এই প্যাকেজে রয়েছে ৮ দিনের ভ্রমণ, ৪ রাত রিসোর্টে থাকা এবং কাছাকাছি মাসিকরিয়ং স্কি রিসোর্টে সফর।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রিসোর্ট কিমের তথাকথিত জনগণকেন্দ্রিক ভাবনার প্রতিফলন এবং পর্যটনকে অর্থনৈতিক অগ্রগতির কৌশল হিসেবে কাজে লাগানোর চেষ্টা। তবে এই সুবিধা ভোগ করবে মূলত পিয়ংইয়ং-এর ক্ষমতাধর অভিজাত শ্রেণি।
এই রিসোর্ট প্রকল্পটি ২০১৩ সালে ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে এটি বিলম্বিত হয়। কিম নিজে অন্তত সাতবার এটির নির্মাণস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং বিশ্বমান বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কিমের স্ত্রী ও কন্যা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে এই রিসোর্ট লাভজনক হবে কি না—তা নিয়ে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ দেশটিতে আন্তর্জাতিক পর্যটন এখনো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং পশ্চিমা পর্যটকদের প্রবেশাধিকারের সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
উত্তর কোরিয়ার এই বিলাসিতা তাই দেশটির বাস্তব মানবিক সংকটের সঙ্গে এক নির্মম বৈপরীত্যের প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।