শিরোনাম

৪০ কোটি টাকা ব্যয়ের পর প্রকল্প বাতিল

৪০ কোটি টাকা ব্যয়ের পর প্রকল্প বাতিল

প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ের পর ‘শেখ হাসিনা স্পেশালাইজড জুট টেক্সটাইল মিল’ প্রকল্পটি বাতিল করেছে সরকার। জামালপুরে বিশেষায়িত প্রকল্পটি নেওয়া হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে।

৫১৯ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়ার সাত বছরে কাজ হয়েছে ২ শতাংশ। যেটুকু কাজ হয়েছে, তাতেও অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে দুর্নীতিরও। এমতাবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার প্রকল্পটি বাতিল করেছে। এখন প্রকল্পের জায়গায় সোলার প্যানেল তৈরির কাজ করছে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুর রউফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রকল্পটি বিগত সরকারের সময় বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন সরকার প্রকল্পটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সচিব জানান, সরকার বিজেএমসির সব প্রকল্প বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই প্রকল্প বিজেএমসির আওতায় ছিল। তাই প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে। সেই প্রকল্পের জায়গায় সোলার প্যানেল স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান আব্দুর রউফ।

পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী স্পেশালাইজড জুট টেক্সটাইল মিল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ৫১৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা প্রাক্কলনের এই প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়। অনুমোদনের সাত বছরে কাজ হয়েছে মাত্র ২ শতাংশ; যা টাকার অঙ্কে ৩৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, বাতিল হওয়া প্রকল্পের জায়গাটি শহর থেকে অনেক দূরে, নদীর কাছে অবস্থিত। তাই এখানে নতুন কোনো ইন্ডাস্ট্রি করা সম্ভব হবে না। তাই ৩৪ একর জায়গায় সোলার প্যানেল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তার জন্য একটি টিএপিপি করা হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) তথ্য বলছে, ২০১৮ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রকল্পের কাজের গতি অত্যন্ত ধীর। এরই মধ্যে জমি উন্নয়নের নামে অনুমোদনের তুলনায় ছয় গুণ বেশি কাজ করা হয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) জানায়, ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ৩৪ একর জমিতে প্রায় ৫ লাখ ৫০ হাজার ঘনমিটার মাটি ফেলা হয়; যার মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২৮ কোটি ২৮ লাখ টাকার কাজ অনুমোদনের বাইরে, যা প্রকল্প ব্যয়ের অতিরিক্ত অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

অথচ প্রকল্প অনুমোদন অনুযায়ী এ কাজে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা এবং মাটি উন্নয়নের নির্ধারিত পরিমাণ ছিল ৮৫ হাজার ৬৪১ ঘনমিটার।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এই অতিরিক্ত কাজের কোনো অনুমোদন পাওয়া যায়নি, এমনকি কোনো চুক্তিপত্রও নেই। কে এই কাজের নির্দেশ দিল, কোন নিয়মে এত বড় ব্যয় হলো, তা স্পষ্ট নয় প্রকল্পের নথিতে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলার ঘাটতির একটি বড় উদাহরণ।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, প্রকল্পের নামে যে খরচ দেখানো হয়েছে, তা প্রকল্প নেওয়ার দুই বছরের মধ্যেই হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রকল্প শুরুর দুই বছর পরই বিজেএমসির ২৫টি পাটকল বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। তখনই প্রকল্পটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবু শেখ হাসিনার নাম থাকায় প্রকল্পটি থামেনি, ফলে অতিরিক্ত প্রায় ২৯ কোটি টাকা খরচ হয়।’

প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুলাইয়ে একনেকে অনুমোদন পায়। প্রথমে ঢাকার ডেমরায় বিজেএমসির লতিফ বাওয়ানী জুট মিলে এটি নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের দাবিতে স্থান পরিবর্তন করে নেওয়া হয় তাঁর নির্বাচনী এলাকা জামালপুরে। কারণ হিসেবে দেখানো হয়, সেখানে শ্রমিক ও কাঁচা পাট সহজলভ্য।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল তুলা এবং পাটের মিশ্রণে পরিবেশবান্ধব সুতা ও কাপড় তৈরি, যা দিয়ে দেশে-বিদেশে ডেনিমসহ বিভিন্ন পোশাক রপ্তানি বাড়ানো যাবে; পাশাপাশি কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে। প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দেরিতে শুরু হওয়ায় সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২১ সাল পর্যন্ত নেওয়া হয়। এরপরও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (শিল্প ও জ্বালানি বিভাগ) মো. রুহুল আমিন বলেন, যেভাবে সময় ও অর্থ অপচয় হয়েছে, তাতে সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হয়েছে। প্রকল্প শেষ না করেই এত টাকা চলে গেছে।

এদিকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি প্রকল্পটি চালুর সুপারিশ করেছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সারসংক্ষেপ বিবেচনায় নিয়ে তা বন্ধের সিদ্ধান্ত দেয়।

পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্প বন্ধ হলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার উচিত হবে, কতটুকু কাজ হয়েছে এবং কীভাবে ব্যয় হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য তুলে ধরা; একই সঙ্গে প্রকল্পের আওতায় কেনা যানবাহনগুলোর ব্যাপারে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button