গুজরাটে বিধ্বস্ত বিমানের ব্ল্যাকবক্স থেকে সব তথ্য উদ্ধার, চলছে বিশ্লেষণ


ভারতের গুজরাটে বিধ্বস্ত এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটির ব্ল্যাকবক্স থেকে সব তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ভারত সরকার এক বিবৃতিতে এ কথা জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, ১২ জুন ঘটে যাওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনা থেকে উদ্ধার হওয়া ব্ল্যাক বক্স থেকে সব তথ্য সফলভাবে ডাউনলোড করা সম্ভব হয়েছে। সেসব তথ্য বিশ্লেষণের কাজ চলছে।
গত ১২ জুন আহমেদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের ৩৬ সেকেন্ডের মাথায় বিধ্বস্ত হয় এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার এআই ১৭১।
২৪২ জন আরোহী নিয়ে লন্ডন যাচ্ছিল বিমানটি। ভয়াবহ এই বিমান দুর্ঘটনায় কেবল একজন যাত্রী বেঁচে গিয়েছিলেন। বিমানের ১১এ সিটের যাত্রী ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক বিশ্বাস কুমার রমেশ। বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে মেডিকেল ছাত্রাবাসসহ যেখানে পড়েছিল সেখানে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত ওই বিমান থেকে উদ্ধারকৃত ব্ল্যাক বক্স দুটি হলো— ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (এফডিআর) ও ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর)। দুর্ঘটনায় এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সব তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হবে কি না এ নিয়ে প্রাথমিকভাবে সংশয় তৈরি হয়েছে।
সূত্রের বরাতে এনডিটিভি জানায়, এফডিআর ও সিভিআরের তথ্যগুলো ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হতে পারে।
তবে বড় অগ্রগতি হিসেবে, বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো (এএআইবি) সফলভাবে ক্র্যাশ প্রটেকশন মডিউল (সিপিএম) এবং মেমরি মডিউল বের করে এনে সব তথ্য ডাউনলোড করতে সক্ষম হয়েছে।
ব্ল্যাক বক্স দুটির একটি হোস্টেলের ছাদ থেকে এবং অন্যটি বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে সেগুলো দিল্লির এএআইবির পরীক্ষাগারে স্থানান্তর করা হয়।
প্রথম ব্ল্যাক বক্সটি গত মঙ্গলবার বিকেল ২টায় দিল্লির এএআইবির ল্যাবে পৌঁছায়। দ্বিতীয়টি পৌঁছায় বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে। সেদিনই তথ্য উদ্ধারের কাজ শুরু হয়। পরদিন বুধবারের মধ্যে কাজ শেষ হয়।
এই দুটি ডিভাইসের মধ্যে, ককপিট ভয়েস রেকর্ডার বা সিভিআরে থাকে ককপিটে থাকা পাইলটদের কথোপকথন, ক্রুদের প্রতিক্রিয়া এবং আশপাশের শব্দ। অন্যদিকে ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার বা এফডিআরে থাকে বিমানের উচ্চতা, গতি, ফ্লাইট কন্ট্রোল ইনপুট ও ইঞ্জিন পারফরম্যান্সসহ বিভিন্ন কারিগরি তথ্য।
সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সিভিআর ও এফডিআর থেকে উদ্ধার করা তথ্য বিশ্লেষণের কাজ চলছে। দুর্ঘটনার ঠিক আগমুহূর্তে কী ঘটেছিল এবং দুর্ঘটনা কী কারণে হয়েছিল সেসব তথ্য আশা করি শিগগিরই জানা যাবে। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিমান চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে।’
এআই ১৭১ ব্ল্যাক বক্স থেকে যেসব তথ্য পাওয়া যেতে পারে,
১. ক্যাপ্টেন সাভারওয়াল জরুরি কল বা ‘ডিস্ট্রেস কল’-এ কী বলেছিলেন?
বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভেঙে পড়ার কয়েক সেকেন্ড আগে একটি জরুরি সংকেত পাঠানো হয়েছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, ক্যাপ্টেন সাভারওয়াল আহমেদাবাদ এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে বলেছিলেন, ‘মে-ডে, মে-ডে…’
কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ক্যাপ্টেন বিমানের পাওয়ার ও থ্রাস্ট হারানোর বিষয়েও সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন।
সিভিআরে তথ্য বিশ্লেষণের পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে, তিনি এ কথা বলেছিলেন কি। এতে তদন্তকারীরা বিমানের ইঞ্জিনসংক্রান্ত ত্রুটিকেই প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করতে পারবেন।
২. বার্তাটি ঠিক কখন পাঠানো হয়েছিল?
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিমানটি দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে উড্ডয়ন করেছিল। এর ৩৬ সেকেন্ড পরই বিধ্বস্ত হয়। এই অল্প সময়ের মধ্যে কী ঘটেছিল তার ধারণা পাওয়া যাবে।
সিভিআরের তথ্য থেকে জানা যাবে ক্যাপ্টেন ঠিক কয়টায় বা কোন মিলিসেকেন্ডে ‘মে-ডে’ বার্তা পাঠিয়েছিলেন। বিমানটিকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে ক্যাপ্টেন সাভারওয়াল ও ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্দার ঠিক কতটুকু সময় পেয়েছিলেন তা জানা সম্ভব হবে।
দুর্ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকা কমিটি এখনো প্রকৃত কারণ নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, দ্বৈত ইঞ্জিন বিকল হওয়া অথবা পুরো সিস্টেমজুড়ে হাইড্রোলিক বা ইলেকট্রনিক ত্রুটি।
এ ধারণার পেছনে শক্ত প্রমাণ হলো, অডিও ও ভিডিও ফুটেজ, যেখানে আরএটি (র্যাম এয়ার টারবাইন) সক্রিয় করার লক্ষণ দেখা গেছে। আরএটি কেবল তখনই বাইরে আসে, যখন বিমানের এনার্জি সিস্টেম বিকল হয়। তাই এটি বড় ধরনের কারিগরি ব্যর্থতার ইঙ্গিত দেয়।
তবে এয়ার ইন্ডিয়ার দাবি, বিমানটির নিয়মিত নিরাপত্তা পরীক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণ চলছিল। ডানদিকের ইঞ্জিনটি পরিবর্তন করা হয়েছে চার মাসও হয়নি। আর বাম ইঞ্জিনটি গত এপ্রিল মাসে পরীক্ষা করা হয়।
এই বিমান দুর্ঘটনা সরকারকেও ভাবনায় ফেলেছে। আগামী সপ্তাহে বেসামরিক বিমান চলাচল খাতে নিরাপত্তা সমস্যা, বিশেষ করে বিমান রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি নিয়ে একটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক বসবে বলে এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানা গেছে।
সরকারি সূত্রের বরাতে এনডিটিভি জানায়, ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল খাতে একাধিক ত্রুটি এবং বিমান রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে বিশেষ উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। কমিটি এ বৈঠকে ঘন ঘন হেলিকপ্টার দুর্ঘটনাগুলো নিয়েও আলোচনা করবে বলে জানা গেছে।
এই বৈঠকে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা, এয়ারলাইনস এবং বোয়িং কোম্পানির প্রতিনিধিদের তলব করা হয়েছে।
আরও পড়ুন—