এক মাস আগে কলেজে আত্মহত্যার চেষ্টা ইপ্সিতার, ভিডিও ভাইরাল


কর্ণফুলী-৪ লঞ্চ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ভোলা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সুকর্ণা আক্তার ইপ্সিতার মৃত্যুর ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অপর দিকে ইপ্সিতার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেটিজেনরা বিভিন্ন মন্তব্য করে ইপ্সিতার বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন। এরই মধ্যে ভোলা সরকারি কলেজের বহুতল ভবন থেকে ইপ্সিতার আত্মহত্যার চেষ্টার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
১৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ভোলা সরকারি কলেজের চারতলা একটি ভবনের কার্নিশ থেকে নিচে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন ইপ্সিতা। একপর্যায়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী ইপ্সিতাকে আটকে দেন। এর মধ্যে তিনজন ছাত্রী তাঁকে দ্রুত কার্নিশ থেকে ওপরে তুলে আনেন। তখন ইপ্সিতার পরনে কলেজের ড্রেস ছিল না। পরে তাঁকে অক্ষত অবস্থায় সেখান থেকে সরিয়ে আনা হয়।
আজ বুধবার (২৫ জুন) দুপুরে কথা হয় ঘটনার ওই দিনের প্রত্যক্ষদর্শী মো. রাজিবের সঙ্গে। তিনি ভোলা সরকারি কলেজের অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি এইচএসসি শিক্ষার্থীদের সার্বিক দায়িত্ব পালন করছি। গত প্রায় এক মাস আগে আমি যখন কলেজের এক্সাম ভবনের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন প্রথমে কয়েকজন ছাত্র আমাকে ওপরে দেখিয়ে বলল, এক ছাত্রী এক্সাম ভবনের নিচতলায় কার্নিশে দাঁড়িয়ে আছে। আমি দেখতে পেয়ে প্রথমে হতভম্ব হয়ে যাই। আর মনে মনে ভাবছি, কী করব আমি? একা একটি মেয়েকে কি বাঁচানো সম্ভব। ঠিক সেই মুহূর্তে এইচএসসির কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে তাৎক্ষণিক ওপরে উঠি। পরে কয়েকজন ছাত্রীকে দিয়ে মেয়েটিকে ওপরে তুলে আনি।
এরপর কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে নিয়ে গেলে স্যার মেয়েটির বাবা-মাকে খবর দিয়ে এনে তাঁদের কাছে হস্তান্তর করেন।’ রাজিব আরও বলেন, মেয়েটিকে হতাশাগ্রস্ত মনে হয়েছিল।
অপর প্রত্যক্ষদর্শী কলেজের মৃত্তিকা বিভাগের অতিথি শিক্ষক মো. ইমরান বলেন, ‘হঠাৎ কলেজের ড্রেস ছাড়া এক ছাত্রীকে এক্সাম ভবনের চারতলার কার্নিশে দেখে আমাদের অফিস সহকারী রাজিবকে ওপরে পাঠাই। তখন রাজিব কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করেন। তবে মেয়েটিকে হতাশাগ্রস্ত দেখা গেছে।
কারণ, সে নিচে কিছুক্ষণ ধরে ভাবছিল। মনে হচ্ছে, সে নিচে লাফ দেবে কি না, ভাবছে। তখন চিন্তা করলাম, সে যেকোনো মুহূর্তে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করতে পারে। তাই দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা করেছি। তখন নিচ থেকে আমাদের কয়েকজন ছাত্র ভিডিওটি তাদের মোবাইলে ধারণ করে।’
মো. ইমরান আরও বলেন, ‘ওই ঘটনার পরে ইপ্সিতার সহপাঠী কয়েকজনকে বলেছিলাম, সে কেন এমন কাজটি করতে চাইল জিজ্ঞেস করো। তখন তারা আমাকে বলল, স্যার, ইপ্সিতা যেকোনো কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। অনেক সময়েই হতাশায় ছিল। কিন্তু কেন হতাশাগ্রস্ত, তা বলবে বলবে বলে আর বলা হয়নি।’
এদিকে কলেজের শিক্ষার্থী সুকর্ণা আক্তার ইপ্সিতার মৃত্যুর রহস্য নিয়ে লক্ষ্মীপুর থানা-পুলিশ ও নৌ পুলিশ তদন্ত করছে বলে জানান ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাহাদাৎ মো. হাচনাইন পারভেজ। তিনি আরও জানান, তাদের সহায়তার জন্য ভোলা থানা-পুলিশও তৎপর রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর থানার ওসি মো. মোন্নাফ বলেন, লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। থানার পুলিশ পরিদর্শক আজিজুল ইসলাম লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেছেন।
উল্লেখ্য, ১৭ জুন ভোলা থেকে কর্ণফুলী-৪ লঞ্চে উঠে মাঝনদীতে ঝাঁপ দেন কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল কর্মী সুকর্ণা আক্তার ইপ্সিতা। নিখোঁজ হওয়ার চার দিন পর লক্ষ্মীপুরে মেঘনা নদী থেকে ইপ্সিতার মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। পরে ভিকটিমের বাবা একটি হত্যা মামলা করেন।