‘ট্রাম্পের চেয়ে নোংরা কেউ নেই’, প্রতিশোধের দাবিতে উত্তাল তেহরান


ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হামলায় ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে ইরানিদের মধ্যে। ইরান এই হামলার মোক্ষম জবাব দেবে বলে আশা করছেন তারা। গতকাল রোববার হাজার হাজার ক্ষুব্ধ জনতা রাজপথে নেমে আসেন। ইরানের পতাকা ও বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাজধানী তেহরানের ইনকিলাব স্কয়ারে জড়ো হন তারা। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে মার্কিন হস্তক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানান। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
ইরানিরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাদের প্রতারণা করেছেন। তাদের ভাষ্য— প্রথমত, পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের আলোচনা চলছিল। শান্তিপূর্ণভাবে এ নিয়ে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল ইরান। এমন সময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে হামলা চালানোর যৌক্তিকতা কী? দ্বিতীয়ত, হামলা চালানো হবে কি না— দুই সপ্তাহ পর সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল হোয়াইট হাউস। হোয়াইট হাউসের এই বক্তব্যের দুদিন পরই হামলা চালাল যুক্তরাষ্ট্র। সব মিলিয়ে ইরানিদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষোভ এখন তুঙ্গে।
এক বিক্ষোভকারী সিএনএনকে বলেন, ‘ইরানিরা সম্মানের মানুষ। অসম্মান আমরা কিছুতেই মেনে নেব না। গত ৪০ বছর ধরে আমরা যেভাবে শক্ত হাতে প্রতিরোধ করে এসেছি, এখনো তাই করব। আমরা অবশ্যই এই হামলার কড়া জবাব দেব।’ তার ভাষ্যমতে, এসব হামলা ইরানকে আরও শক্তিশালী করেছে, ইরানিদের মধ্যে ঐক্য বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘এখানে যারা জড়ো হয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পরম মিত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে তাদের বেশির ভাগই ইসলামিক রিপাবলিকের নীতিবিরোধী। কিন্তু শত্রুপক্ষের হামলার পর এখন ইসলামিক রিপাবলিকের জয় দেখতে চাই আমরা।’
এ সময় ট্রাম্পকে বিশ্বের সবচেয়ে ‘নোংরা’ রাজনীতিবিদ আখ্যা দেন এক বিক্ষোভকারী। তিনি মনে করেন, কেবল নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেন ট্রাম্প। ওই বিক্ষোভকারী বলেন, ‘ট্রাম্পের চেয়ে ঘৃণ্য মানুষ আর নেই। তিনি প্রথমে দুই সপ্তাহ সময় দিলেন। এর দুই দিন পরই আকস্মিক হামলা চালালেন। আমাদের কাছে কোনো পারমাণবিক অস্ত্র নেই। তাহলে কেন আমাদের ওপর হামলা?’ প্রশ্ন তোলেন তিনি।
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিমূলক— এ কথা ইরান সরকার বারবার বলে এসেছে। এমনকি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাও এ বিষয়ে একই রকম মূল্যায়ন দিয়েছে। তারাও বলছে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে ইরানের আরও অনেক সময় লাগবে। তারপরও ট্রাম্প চালালেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি নিজের গোয়েন্দা সংস্থার মূল্যায়নকেই খারিজ করলেন।
ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব নতুন নয়। বহু বছর ধরেই মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই শক্তির মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। গত কয়েক মাসে যা বেড়েছে আরও কয়েক গুণ। চলতি মাসের শুরু থেকেই আরও থমথমে হয়ে যায় পরিস্থিতি। ইসরায়েল ইরানে হামলা করবে কিনা— এ নিয়ে চলছিল নানা জল্পনা-কল্পনা। অবশেষে গত ১৩ জুন সব কল্পনা-জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে সত্যিই ইরানে হামলা চালিয়ে বসে ইসরায়েল। আর এরপরই দুপক্ষের মধ্যে শুরু হয় যুদ্ধ। এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কি জড়াবে কি না— তা নিয়ে নানা গুঞ্জন ছিল। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেই এর চরম বিরোধিতা করছিলেন ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান দুই শিবিরই। কিন্তু সেসব কিছুর তোয়াক্কা না করে গতকাল রোববার মধ্যপ্রাচ্য সময় ভোরে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র।
এসব হামলায় স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি হলেও পারমাণবিক কর্মসূচির তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি বলেই জানিয়েছে ইরানি কর্তৃপক্ষ।