বাস-ট্রাক পার্কিংয়ে সড়ক দখল, যাত্রীদের দুর্ভোগ


গোপালগঞ্জ জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কে বছরের পর বছর বাস, ট্রাক ও মাইক্রোবাস পার্ক করে রাখা হচ্ছে। বিভিন্ন সড়কের এক লেন দখল করে রাখা হচ্ছে এসব যানবাহন। এতে প্রতিদিন যানজটসহ নানা ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ। মালিক-শ্রমিকেরা বলছেন, নির্ধারিত স্ট্যান্ড না থাকায় বাধ্য হয়ে রাস্তায় গাড়ি রাখছেন তাঁরা। এদিকে জেলা প্রশাসক (ডিসি) বলছেন, সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা শহরের দুই লেন সড়কের এক লেন দখল করে ব্যবহার করা হচ্ছে বাস, ট্রাক ও মাইক্রোস্ট্যান্ড হিসেবে। কোথাও রাস্তার ওপর দাঁড়িয়েই ওঠানো-নামানো হচ্ছে যাত্রী; ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান থেকে খালাস করা হচ্ছে মালপত্র। এমন দৃশ্য গোপালগঞ্জ শহরের গুরুত্বপূর্ণ ৪টি সড়কে। সেগুলোর মধ্যে শহরে প্রবেশের অন্যতম সড়ক কুয়াডাঙ্গায় রয়েছে বাসস্ট্যান্ড এবং ব্যস্ততম ক্রিকেট স্টেডিয়াম সড়কে ট্রাকস্ট্যান্ড। এ ছাড়া সিটি কলেজ এবং সড়ক ও জনপথ ভবনের সামনের বাইপাস সড়ক মাইক্রোস্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে যেমন যানজটে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মানুষ, তেমনি ঘটছে দুর্ঘটনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই জেলা সদরে রয়েছে তিন শতাধিক লোকাল বাস, তিন শতাধিক ট্রাক ও পিকআপ এবং দুই শতাধিক প্রাইভেট কার ও মাইক্রো। নামমাত্র জরাজীর্ণ বাস টার্মিনালে সংকুলান না হওয়ায় শহরের এসব সড়কে সেগুলো রাখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পথচারী মো. তাজবীর বলেন, ‘শহরের প্রাণকেন্দ্রে রাস্তা দখল করে ট্রাক, মাইক্রোস্ট্যান্ড করা হয়েছে। এতে প্রতিনিয়ত যানজটের পাশাপাশি ছোট-বড় দুর্ঘটনাও ঘটছে।’
ফারিয়া পরিবহনের মালিক ফিরোজ মোল্লা বলেন, ‘কুয়াডাঙ্গায় একটি অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ড আছে। সেখানে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে রাস্তার ওপরে গাড়ি রাখতে হয়। পর্যাপ্ত বাস রাখার জন্য কোনো স্ট্যান্ড করা হলে আমরা কেউই রাস্তায় বাস রাখব না। এ জন্য আমাদের একটি বড় জায়গাসহ বাসস্ট্যান্ড প্রয়োজন।’
গোপালগঞ্জ জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আল আমিন মোল্লা বলেন, ‘গোপালগঞ্জে ট্রাক রাখার নির্ধারিত কোনো স্ট্যান্ড নেই। একসময় আমরা শহরের মূল সড়কে ট্রাক-পিকআপ রাখতাম। যানজটের কারণে ওই রাস্তা থেকে সরিয়ে বর্তমান যে রাস্তায় এখন স্ট্যান্ড রয়েছে, সেখানে রাখতে বলা হয়। সাত-আট বছর হলো, এখানে রাখা হচ্ছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হয়, সেটা জানি। প্রশাসন থেকে বারবার স্ট্যান্ডের জন্য জায়গা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। নির্ধারিত স্ট্যান্ড করে দেওয়া হলে যানজট কমার পাশাপাশি ট্রাক মালিক-শ্রমিক হাঁপ ছেড়ে বাঁচতে পারবে।’
জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. বুলবুল শেখ বলেন, ‘পার্কিংয়ের জায়গা না থাকায় রাস্তার পাশে যত্রতত্র গাড়িগুলো ফেলে রাখা হয়। প্রতিনিয়ত গাড়িগুলো থেকে ব্যাটারিসহ বিভিন্ন পার্টস চুরি হয়। এতে আমার শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকদের ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। স্ট্যান্ড থাকলে সেখান থেকে মালপত্র চুরি হওয়া কঠিন হতো, শ্রমিকেরাও শান্তিতে থাকতে পারত। আমি চাই, জেলায় যে বাস টার্মিনাল রয়েছে, সেটি ভেঙে এবং নতুনভাবে পাশের জমি অধিগ্রহণ করে একটি বড় এবং আধুনিক টার্মিনাল নির্মাণ করা হোক।’
ডিসি মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘শহরের ভেতরে পর্যাপ্ত জায়গা নেই। মহাসড়কের পাশে বাস টার্মিনাল থাকলেও যে পরিমাণ জায়গা প্রয়োজন, সেটি অধিগ্রহণ করা হয়নি। এরই মধ্যে সব পরিবহন সমিতির সঙ্গে কথা হয়েছে। পৌরসভা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জায়গা নির্ধারণের জন্য বলা হয়েছে।’