শিরোনাম

গাজায়ও ইসরায়েলের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ

গাজায়ও ইসরায়েলের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যেও থেমে নেই গাজায় হত্যাযজ্ঞ। গতকাল মঙ্গলবারও গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে ত্রাণপ্রার্থী বহু ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। কিন্তু পুরো বিশ্বের মনোযোগ ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের দিকে থাকায় চাপা পড়ে যাচ্ছে গাজায় চলমান নৃশংসতা।

বার্তা সংস্থা এএফপি, কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল জাজিরাসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, গাজায় হামাস নিধনে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান চলছে ২০ মাসের বেশি সময়। ইরানে ইসরায়েলি হামলা শুরুর বহু আগেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা। খাদ্যসহ আন্তর্জাতিক সহায়তা ঢোকার পথ রুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানে এখন খাদ্য, জ্বালানি আর সুপেয় পানির জন্য হাহাকার চলছে। প্রতিদিন ত্রাণ সহায়তাকেন্দ্রে ভিড় করছে হাজারো ক্ষুধার্ত মানুষ। আর ইসরায়েলি বাহিনী সেই ক্ষুধার্ত মানুষগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে।

গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে, গতকালও খান ইউনিসে ত্রাণপ্রার্থী মানুষদের ওপর গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সংস্থাটির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এএফপিকে বলেন, সকালে ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) ত্রাণকেন্দ্রে ত্রাণ নিতে জড়ো হয়েছিল হাজারো ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি বাহিনী প্রথমে ড্রোন থেকে তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে। কয়েক মিনিট পর ইসরায়েলি ট্যাংক থেকে গোলা ছোড়া হয়। এতে ৭০ জনের বেশি নিহত এবং প্রায় ২০০ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়া গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় আরেক শহর রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে চারজন নিহত হয়েছে। সব মিলিয়ে গতকাল গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৮৯ জন নিহত হয়েছেন।

হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে ২০০ জনের বেশি আহত মানুষকে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ২০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ইসরায়েলি বাহিনীও স্বীকার করেছে, খান ইউনিসে গুলি ও গোলা ছোড়া হয়েছে। বিষয়টি তারা তদন্ত করছে। ত্রাণ বিতরণকারী ট্রাকটি ইসরায়েলি বাহিনীর আওতাধীন এলাকাসংলগ্ন জায়গায় দাঁড়িয়েছিল বলে তারা দাবি করেছে।

গাজা উপত্যকায় গত মার্চে ত্রাণ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। গত মে মাসের শেষ দিকে এই অবরোধ আংশিক তুলে নেওয়া হয়। তখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিট্যারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) গাজায় ত্রাণ বিতরণ করছে। কিন্তু জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রেও সম্প্রতি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

জাতিসংঘ ত্রাণ সহায়তা সংস্থা ওসিএইচএ সতর্ক করে বলেছে, ব্যাপক খাদ্যসংকটে পড়েছে গাজা। শিগগির হয়তো সেখানে দুর্ভিক্ষ শুরু হবে।

এদিকে গাজার উত্তরাঞ্চলে চলমান শেষ হাসপাতালটিও আক্রান্ত হয়েছে। এ সময় অনেকে হতাহত হয়। আহতদের একজন আমির আবু সাফিয়া। তিনি এএফপিকে বলেন, ‘উত্তর থেকে দক্ষিণ—প্রতিদিনই আমাদের ওপর বোমা ফেলা হচ্ছে। আল-আহলি হাসপাতাল ধ্বংস হয়ে গেছে। চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে গেছে। আমার হাতে আঘাত লেগেছে, কিন্তু সেই ক্ষত ঢাকতে ব্যান্ডেজটাও নেই এখানে। কোনো ওষুধও নেই।’

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) গাজা কার্যালয়ের প্রধান আলেসান্দ্রো মারাচ্চি এএফপিকে বলেন, ‘ফিজিওথেরাপিসহ আমরা আমাদের জরুরি সেবার বিভাগগুলো পুনরায় চালু করছি।’

ইসরায়েলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার জেরে গাজায় অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামাসের ওই হামলায় ১ হাজার ২১৯ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছিল। আর ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংসতায় গত সোমবার পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছে ৫৫ হাজার ৫০০ জনের বেশি। এর মধ্যে গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি শেষে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান পুনরায় শুরু হওয়ার পর নিহত হয়েছে ৫ হাজার ২০০ জনের বেশি।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button