১৫০ টাকার তরমুজ ৬০০! কৃষক ঠকছে, সিন্ডিকেট জিতছে


ক্রাইম জোন ২৪।। বরগুনার মাঠে বাম্পার তরমুজের ফলন হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। তিন মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর যে তরমুজ ক্ষেত থেকে মাত্র ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন কৃষক, সেই একই তরমুজ চার হাত ঘুরে বাজারে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকায়! অথচ প্রকৃত চাষির হাতে থাকছে সামান্য কিছু টাকাই। সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে তরমুজের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষিরা, আর ভোক্তাদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত দাম।
বরগুনার বিভিন্ন তরমুজ ক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকেরা ক্ষেত থেকেই পাইকারদের কাছে তরমুজ বিক্রি করছেন ১৫০-২০০ টাকায়। কিন্তু এই তরমুজ বাজারে এসে হয়ে যাচ্ছে ৫০০-৭০০ টাকা। পাইকার, আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা একের পর এক লাভের হিসাব গুনলেও, তরমুজ চাষিরা বঞ্চিত হচ্ছেন ন্যায্য দামে।
লবণগোলা এলাকার কৃষক নয়ন মিয়া বলেন, “তিন মাস কষ্ট করে তরমুজ ফলাই, অথচ আমাদের কোনো লাভ হয় না। সার, কীটনাশক, শ্রমিকের খরচ সব মিলিয়ে জমির ফসল বিক্রি করে তেমন কিছু থাকে না। পাইকাররা ১৫০ টাকায় কিনে নিয়ে যায়, অথচ বাজারে সেটা ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। আমরা কি মানুষ না?”
পটুয়াখালী থেকে আসা পাইকার আবুল কালাম বলেন, “আমরা কৃষকের জমি আগেই কিনে নেই, পরে সংগ্রহ, পরিবহন ও অন্যান্য খরচ যুক্ত হলে আমাদের প্রতিটি তরমুজ ২০০ টাকার বেশি পড়ে যায়। আমরা সেটি ২২০-২৫০ টাকায় আড়তদারদের কাছে বিক্রি করি। কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে।”
কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী, কৃষক থেকে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ মুনাফা করা যাবে। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, খুচরা বিক্রেতারা ৬০-১৩০ শতাংশ পর্যন্ত লাভ করছেন!
এ বিষয়ে বরগুনা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. শাহ্জাহান আলী বলেন, “আমরা নিয়মিত বাজার তদারকি করছি। কিন্তু বাজারে আমাদের উপস্থিতি কম থাকলে দাম আবার বেড়ে যায়। ক্রেতাদেরও সচেতন হতে হবে এবং অতিরিক্ত দাম দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।”
বাজারে তরমুজ কিনতে আসা ক্রেতা আল-আমিন হিরা বলেন, “রমজান মাস এলেই তরমুজের দাম বাড়িয়ে দেয় ব্যবসায়ীরা। কৃষকেরা কম দামে বিক্রি করলেও, আমাদের কেন এত বেশি দাম দিতে হবে? ২০০ টাকার তরমুজ ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি করছে খুচরা বিক্রেতারা। এটা একেবারেই অন্যায়!”
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সুচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “আমরা বাজার পর্যবেক্ষণ করছি এবং নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। পাইকারি বাজারে তরমুজের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে থাকলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা করছে। আমরা এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
তরমুজ মৌসুম এলেই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বাড়ে, আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষক ও সাধারণ ভোক্তা। সরকারের কঠোর নজরদারি ও সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে তরমুজ সংগ্রহের ব্যবস্থা না থাকলে, এমন শোষণ বারবার চলতেই থাকবে।