রাবি ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের বিক্ষোভ


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ‘জুলাই ৩৬’ হলের ছাত্রীদের নিয়ে ‘বিনা পারিশ্রমিকে যৌনকর্মী’ মন্তব্যের প্রতিবাদে ছাত্রদলের নেতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১০টায় হলের সামনে এই বিক্ষোভ করেন তাঁরা।
গত সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে হল প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘রাত ১১টার পর হলে প্রবেশ করায় ৯১ ছাত্রীকে প্রাধ্যক্ষের কার্যালয়ে তলব করা হবে। ওই বিজ্ঞপ্তি ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তৈরি একটি ফটোকার্ডে রাবি ছাত্রদল নেতা আপত্তিকর ওই মন্তব্য করেন।
তিনি লেখেন, ‘এগুলো ছাত্রী নয়, এগুলো বিনা পারিশ্রমিকে যৌনকর্মী।’
ওই নেতার নাম আনিসুর রহমান মিলন। তিনি দর্শন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখ্দুম হল ছাত্রদলের সহসভাপতির দায়িত্বে আছেন। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘২০২৫ সালেও নারী নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। সাইবার বুলিংয়ের কারণে নারীরা নির্বাচনে অংশ নিতে ভয় পাচ্ছেন। রহমাতুন্নেছা হলে যেমন হয়েছিল, আজ জুলাই ৩৬ হলের ৯১ জন ছাত্রীকে নিয়ে এমন মন্তব্য করা হলো। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
আরেকজন বলেন, ‘শুধু মিলন নয়, অনেক ছেলে ও মেয়ে আছে, যারা নারী হয়েও আরেক নারীকে নিয়ে সাইবার বুলিং করে। তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।’
বিষয়টি নিয়ে মিলনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকেই তাঁর ফেসবুক আইডি ডিঅ্যাক্টিভেট করা হয়েছে।
তবে এ ঘটনায় শাখা ছাত্রদলের দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
সংগঠনটির সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের একজন সদস্য এমন মন্তব্য করেছে শুনেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। সে জানিয়েছে, গতকাল রাত থেকে তার ফেসবুক আইডি নিয়ন্ত্রণে নেই। মন্তব্যটি সে করেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে কমেন্টটি যদি তার প্রমাণিত হয়, তাহলে আমরা অবশ্যই তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করব। এমন মতাদর্শের মানুষের ছাত্রদলে কোনো স্থান নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাহবুবর রহমান বলেন, ‘আমাদের নজরে ওই কমেন্টসহ অন্যান্য কমেন্টও এসেছে। আমরা আগামীকালই ওই ছাত্রনেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেব। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপের এডমিনদের সঙ্গেও কথা বলব। সাইবার বুলিং প্রতিরোধ সেল বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।’
ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, ‘এ ধরনের মন্তব্য যারা করে, তারা কতটা অসুস্থ মানসিকতার মানুষ, তা সহজেই বোঝা যায়। এ ধরনের মানুষের কাছে কেউই নিরাপদ নয়। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। আপনার মাধ্যমেই বিষয়টি জানলাম। সত্যতা পেলেই ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে বিষয়টি তোলা হবে।’
এর আগে সোমবার রাতে হল প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জুলাই ৩৬ হলের অনাবাসিক ও গণরুমের ছাত্রীদের মধ্যে যাঁরা দেরিতে (রাত ১১টার পর) হলে ফিরেছেন, তাঁদের ক্রমিক নম্বর ১-৪৫ পর্যন্ত মঙ্গলবার এবং ৪৬-৯১ পর্যন্ত বুধবার বিকেল ৪টায় প্রাধ্যক্ষের অফিসে উপস্থিত থাকতে হবে।’ যদিও পরে সমালোচনার মুখে মঙ্গলবার দুপুরে নোটিশটি প্রত্যাহার করা হয়।
ক্রাইম জোন ২৪