তিন পক্ষের আলাদা শোভাযাত্রা, সমাবেশ




জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা বিএনপির অন্তঃকোন্দল গড়িয়েছে দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও। আজ বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) ইসলামপুর উপজেলা এবং পৌর বিএনপির ব্যানারে আলাদাভাবে সমাবেশ ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে দলটির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করা হয়। এতে অন্তঃকোন্দলের বিষয়টি তৃণমূলের কাছে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
এতে এক পক্ষে নেতৃত্ব দেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবং সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মাহমুদ বাবু; অন্য পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ এস এম আব্দুল হালিম। আরেকটি পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের ছোট ভাই ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম খান ফরহাদ।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শোভাযাত্রা ও সমাবেশে নেতৃত্বদানকারী ওই তিনজনই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। সেই লক্ষ্যে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দলীয় কর্মসূচি পালনসহ মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে উপজেলা, পৌর এবং ১২টি ইউনিয়ন বিএনপির কমিটির সিংহভাগ নেতা-কর্মী ঐক্যবদ্ধ থাকায় মাঠপর্যায়ে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মাহমুদ বাবু।
অন্যদিকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হওয়ায় কেন্দ্রীয়ভাবে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ এস এম আব্দুল হালিম। বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য নজরুল ইসলাম খানের ছোট ভাই হওয়ার সুবাদে মনোনয়নপ্রত্যাশী শরিফুল ইসলাম খান ফরহাদের দলীয় অবস্থান অনেকটাই মজবুত।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) উপজেলা শাখার আয়োজনে ইসলামপুর কেন্দ্রীয় অডিটরিয়াম মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-পূর্ব আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মাহমুদ বাবু।
পৌর বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম ঢালীর সভাপতিত্বে এবং উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নবাবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ওই আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির প্রধান উপদেষ্টা আব্দুল ওয়াহাব মাস্টার প্রমুখ।
পরে সেখান থেকে উপজেলা ও পৌর বিএনপির আয়োজনে একটি শোভাযাত্রা বের হয়ে পৌর শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বটতলা চত্বরে সমাবেশ করেন নেতা-কর্মীরা।
অন্যদিকে বেলা ১১টার দিকে ইসলামপুর উপজেলা এবং পৌর বিএনপির ব্যানারে ইসলামপুর কলেজ মাঠে আলোচনা সভা শেষে একটি শোভাযাত্রা বের করেন দলটির একাংশের নেতা-কর্মীরা। শোভাযাত্রাটি পৌর শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে থানা মোড় বটতলা চত্বরে সমাবেশে মিলিত হন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ এস এম আব্দুল হালিম।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি নবী নেওয়াজ খান লোহানী বিপুল, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও জেলা বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন সরকার।

এ ছাড়া বিকেল চারটার দিকে ইসলামপুর সরকারি কলেজ মাঠ থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সহোদর ছোট ভাই ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম খান ফরহাদের নেতৃত্বে একটি শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বটতলা চত্বরে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত আকারে নেতা-কর্মীরা বক্তব্য দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিউল্লাহ বুলবুল, বেলগাছা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি নুর আলম, পৌর বিএনপির সহসভাপতি মোজাম্মেল হক প্রমুখ।
তিন ভাগে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ এস এম আব্দুল হালিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি সব সময় দলের ঐক্য চাই। ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলের কর্মসূচি পালন করতে পারলে ভালো। তবে গণতান্ত্রিক দেশে একটি দলের মধ্যে পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করা হতেই পারে। এই আসনে একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী হওয়ায় পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই শেষে দল নির্ধারণ করবে, কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। আমি সবাইকে নিয়ে কাজ করার পক্ষে।’
উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মাহমুদ বাবু বলেন, ‘আমাকে এখানকার বিএনপির নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উপজেলা ও পৌর বিএনপির আয়োজনে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করেছি। ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলে কাজ করতে আমাদের আন্তরিকতার কমতি নেই। অনুষ্ঠানে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সবাই এক ব্যানারে দলের কর্মসূচি পালন করাটার মধ্যে আনন্দই আলাদা। উপজেলা ও পৌর বিএনপির ব্যানারে অন্য কোনো পক্ষ দলীয় কর্মসূচি পালন করলেও আমরা সেটাও আপত্তি করছি না। ১৯৯১ সাল থেকে সব কটি নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমার ওপর দলের যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। আমি প্রায় চার দশক ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।’
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী শরিফুল ইসলাম ফরহাদ খান বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আসছে নির্বাচনে আমি দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। ইসলামপুরবাসীর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। সংসদে যাওয়ার সুযোগ দিলে অনিয়ম-দুর্নীতি ও চাঁদাবাজমুক্ত সমাজ গঠন করব। এ ছাড়া নদীভাঙন রোধ, শিক্ষাব্যবস্থাসহ উপজেলাবাসীর সার্বিক উন্নয়নে কাজ করব।’