শিরোনাম
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক: ‘সিঙ্গাপুরের’ নিচেই আবদুল্লাহপুর২৪ চিকিৎসকের ১৭ জননেই, অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধআজকের নামাজের সময়সূচি: ২৭ আগস্ট ২০২৫বিল ভরাট, মাছ কমে যাওয়া ও বর্জ্যে দূষণজেনেভা ক্যাম্পে যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযানে ৮ জন আটক‎চাকরি, রপ্তানি, প্রবৃদ্ধি—ট্রাম্পের শুল্কের কোপ পড়ছে ভারতের যেসব খাতেবিতর্কিত মন্তব্যে পাকিস্তানে জনপ্রিয় আলেম ইঞ্জিনিয়ার আলি মির্জা গ্রেপ্তারযুদ্ধবিরতি চেয়ে ইসরায়েলজুড়ে বিক্ষোভ, নেতানিয়াহুর রোষানলে জিম্মিদের পরিবারহিজাব না পরার অভিযোগ সত্য নয়, দাবি বরখাস্ত ভিকারুননিসার শিক্ষিকারসিলেটে ‘গায়েবি’ মামলার ২৮ জনকে অব্যাহতি দিতে বলেছে পুলিশ

বিল ভরাট, মাছ কমে যাওয়া ও বর্জ্যে দূষণ

বিল ভরাট, মাছ কমে যাওয়া ও বর্জ্যে দূষণ

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা বাজারের বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট কোনো স্থান না থাকায় সেখানকার ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন পাশের জুড়ী নদীতে ফেলেন ময়লা-আবর্জনা। এসব বর্জ্য কোনো বাধা ছাড়াই গিয়ে পড়ছে দেশের সর্ববৃহৎ হাকালুকি হাওরে। এতে যেমন নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য, তেমনি বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে হাওর। শুধু জুড়ী নদীই নয়; এ রকম ১০টি নদী এবং অসংখ্য পাহাড়ি ছড়ার এই হাওরের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। সেসব দিয়েও আসছে বালু। এতে অধিকাংশ বিলই ইতিমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি করে হাওর দখলে নেওয়ারও।

অনুসন্ধানে জানা যায়, হাকালুকি হাওর এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি। এর আয়তন প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে শুধু বিলের আয়তন ৪ হাজার ৪০০ হেক্টর। হাওরটি মৌলভীবাজারের বড়লেখা, কুলাউড়া, জুড়ী; সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ এবং বিয়ানীবাজার উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত। জুড়ী, ফানাই, সুনাইসহ ১০টি নদ-নদী এবং অসংখ্য পাহাড়ি ছড়ার হাওরের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। সুনাই, পানাই ও জুড়ী নদী এই বিশাল হাওরের মূল প্রবাহ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পলি জমে অনেক বিল ভরাট হয়ে গেছে। কাগজে-কলমে ২৩৮টি বিল থাকলেও প্রায় অর্ধেকের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যেগুলো অবশিষ্ট আছে, তাও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বছর কয়েক আগে যেসব বিলের নাব্যতা ২০-২৫ ফুট গভীর ছিল, এখন সেগুলো কমে ৮-১০ ফুটে চলে এসেছে। এ ছাড়া হাওরের আয়তন ১৮ হাজার হেক্টর লেখা থাকলেও বাস্তবে কতটুকু আছে, তা কেউ জানেন না। অনেকে ঘরবাড়ি বানিয়ে হাওর দখল করে নিয়েছেন।

হাকালুকি হাওরের বৈশিষ্ট্য হারানোর বিষয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব ও হাওর কৃষি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নূর হোসেন মিঞা বলেন, ‘কয়েকটি কারণে হাওর বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে। হাওরের ভেতরে অপরিকল্পিত বাঁধ ও রাস্তা নির্মাণের কারণে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। স্রোতে যে বালু আসে সেগুলো জমা হয়ে আস্তে আস্তে উঁচু হয়ে যাচ্ছে, যার ফলে হাওর পানি ধরে রাখতে পারছে না। আমরা যেসব প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করছি, এগুলো যত্রতত্র হাওরের পানির মধ্যে ফেলে দিচ্ছি; এসব বর্জ্যের কারণে হাওর ভরাট হচ্ছে। উজান থেকে যেসব পানি আসে, তা বঙ্গোপসাগরে নামার আগে বড় বড় সেতুর পিলারের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে; ফলে নদীগুলোতে বালু জমা হয়ে চর সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নদীতে আগের মতো পানি ধারণক্ষমতা নেই। আমাদের যেসব হাওরে মাছ, ফসল উৎপাদন ও পানি থাকার কথা; এসব জায়গায় সবকিছু কমে যাচ্ছে হাওর ভরাট হওয়ার কারণে। পলি মাটির জায়গায় বালু এসে হাওর ভরাট হচ্ছে।’

হাওর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হাওরের মধ্যে ভেসে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য। জানা গেছে, এসব বর্জ্যে একদিকে দূষিত হচ্ছে হাওরের পানি; অন্যদিকে ভরাট হচ্ছে হাওর। হাওর ভরাটের প্রভাবে অল্প বৃষ্টিতে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর বন্যায় কয়েক মাস কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাওর পারের লাখো মানুষ পানিবন্দী ছিল। এ বছর হাওরে পানি তুলনামূলক কম। ফলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে হাওর।

জুড়ী উপজেলার হাওর পারের বাসিন্দা শফিকুর রহমান বলেন, ‘হাওরে আগের মতো মাছ মেলে না। হাওরের পানির নিচে হাত দিলেই শুধু প্লাস্টিক হাতে আসে। আগে যে জায়গায় ১৫-২০ ফুট গভীর পানি ছিল, এখন সেই জায়গায় ৫-৭ ফুট। বালু এসে আস্তে আস্তে বিলগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। সরকারিভাবে হাওর রক্ষার কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন মৌলভীবাজার জেলা শাখার সভাপতি সালেহ সোহেল বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে বড় মিঠাপানির হাওর হাকালুকি বর্তমানে সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। এর বিলগুলো জরুরিভাবে খনন করা প্রয়োজন। হাওরের জলজ উদ্ভিদগুলো রক্ষা করতে হবে। হাওরের প্রবেশ পথে ছড়া ও নদীগুলো খনন করতে হবে।’

মৌলভীবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মাঈদুল ইসলাম বলেন, ‘হাকালুকি হাওরে বর্জ্য যাচ্ছে, বিষয়টি জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে দেখা হয়। অথবা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা এটা দেখাশোনা করে; এটা তাদের দায়িত্ব। এ ছাড়া আমাদের বললে আমরা সেখানে যাব।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরিফ হোসেন জানান, ২৩৮টি বিল আছে হাকালুকি হাওরে। এসব বিলের ৬০ শতাংশ ইজারা দেওয়া হলেও বাকিগুলো ভরাট হওয়ার কারণে ইজারা দেওয়া যাচ্ছে না। একসময় হাওরে দেশীয় ২৬০ প্রজাতির মাছ ছিল, ২০১৫ সালের একটি জরিপে ১৪৩ প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক সৈয়দ ফয়েজুল ইসলাম বলেন, আমরা হাকালুকি হাওর ও টাঙ্গুয়ার হাওরের জন্য হাওর সুরক্ষা আদেশ তৈরি করছি। আমাদের নির্বাহী কমিটির সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করি আগামী এক মাসের মধ্যে এই আদেশ জারি করা হবে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, ‘আমরা হাওরে বর্জ্য পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণ করব। যাতে বর্জ্য ও বালু দ্বারা হাওর ভরাট না হয়। এ ছাড়া হাওর সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হবে।’


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button