শিরোনাম

তিন বছরে দেশে দারিদ্র্য বেড়েছে ৯.২৩%: পিপিআরসি গবেষণা

তিন বছরে দেশে দারিদ্র্য বেড়েছে ৯.২৩%: পিপিআরসি গবেষণা

দেশে গত তিন বছরে দরিদ্রের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিশিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) এক গবেষণা তথ্য বলছে, দেশে এখন দারিদ্র্যের হার ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অথচ সরকারি হিসাবেই ২০২২ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। সেই হিসাবের তিন বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ।

গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এলজিইডি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে ‘ইকোনমিক ডায়নামিকস অ্যান্ড মুড অ্যাট হাউসহোল্ড লেবেল ইন মিড ২০২৫’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে পিপিআরসি। অনুষ্ঠানে পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারও সংগত কারণে ক্ষুদ্র অর্থনীতির তুলনায় সামষ্টিক অর্থনীতিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। অর্থনীতির পরিকল্পনায় জনমুখী দৃষ্টি (পিপলস লেন্স) থাকা খুবই জরুরি। শুধু জিডিপির ওপর আলোচনাটা সীমাবদ্ধ না রেখে সমতা, ন্যায়বিচার, বৈষম্যহীনতা ও নাগরিকের কল্যাণ নিয়ে আলোচনা বাড়াতে হবে আমাদের।’

গত মে মাসে ৮ হাজার ৬৭টি পরিবারের ৩৩ হাজার ২০৭ জন ব্যক্তির মতামতের ভিত্তিতে গবেষণাটি করে পিপিআরসি। সংস্থাটির গবেষণা অনুসারে, গত তিন বছরে অতি দারিদ্র্যের হারও বেড়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, সরকারি হিসাবেই ২০২২ সালের অতি দারিদ্র্যের হার ছিল ৫ দশমিক ৬। ২০২৫ সালে এসে অতি দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৫-এ। বর্তমানে ১৮ শতাংশ পরিবারের অবস্থা নাজুক, এ পরিবারগুলো যেকোনো সময় দরিদ্র হয়ে যেতে পারে।

চলমান তিন সংকটের প্রভাব

পিপিআরসি বলেছে, দেশে এখন তিন ধরনের সংকটের প্রভাব চলমান আছে। এগুলো হলো কোভিড (২০২০-২২), মূল্যস্ফীতি ও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। পিপিআরসি আরও বলেছে, গত বছরের আগস্টের পর ঘুষ কমলেও একেবারে বন্ধ হয়নি। গত বছরের আগস্ট মাসের আগে গবেষণায় মতামত প্রদানকারীদের ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ সেবা নিতে ঘুষ দিয়েছেন। আগস্ট মাসের পর এই হার ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশে নেমেছে। সবচেয়ে বেশি ঘুষ দেওয়া হয়েছে সরকারি অফিসে।

এর পর পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের বেশি ঘুষ দিয়েছেন মানুষ।

শহরের পরিবারে আয় কমেছে, খরচ বেড়েছে

পিপিআরসির গবেষণায় দেখা গেছে, তিন বছরের ব্যবধানে শহরের পরিবারের মাসিক আয় কমেছে; কিন্তু খরচ বেড়ে গেছে। শহরের একটি পরিবারের গড়ে মাসিক আয় ৪০ হাজার ৫৭৮ টাকা। খরচ হয় ৪৪ হাজার ৯৬১ টাকা। ২০২২ সালে শহরের একটি পরিবারের মাসিক গড় আয় ছিল ৪৫ হাজার ৫৭৮ টাকা।

অন্যদিকে গ্রামের পরিবারের গড় আয় কিছুটা বেড়েছে। গ্রামের একটি পরিবারের গড় আয় ২৯ হাজার ২০৫, খরচ ২৭ হাজার ১৬২ টাকা। ২০২২ সালে গ্রামের পরিবারের গড় আয় ছিল ২৬ হাজার ১৬৩ টাকা।

সার্বিকভাবে জাতীয়ভাবে একটি পরিবারের মাসে গড় আয় ৩২ হাজার ৬৮৫ টাকা। খরচ হয় ৩২ হাজার ৬১৫ টাকা। সঞ্চয় নেই বললেই চলে।

খাবারে খরচ প্রায় ৫৫%

একটি পরিবার কোন খাতে কত খরচ করে, এর একটি চিত্র দিয়েছে পিপিআরসি। সেখানে দেখা গেছে, একটি পরিবারের মাসের মোট খরচের প্রায় ৫৫ শতাংশ চলে যায় খাবার কেনায়। একটি পরিবার খাবার কিনতে মাসে গড়ে ১০ হাজার ৬১৪ টাকা খরচ করে। এ ছাড়া প্রতি মাসে শিক্ষায় ১ হাজার ৮২২, চিকিৎসায় ১ হাজার ৫৫৬, যাতায়াতে ১ হাজার ৪৭৮ ও আবাসনে ১ হাজার ৮৯ টাকা খরচ হয়।

অনুষ্ঠানে পুরো পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় পাঁচটি নতুন ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্র আমাদের বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার। প্রথমত, আমাদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী রোগের বোঝা ক্রমেই বাড়ছে। ক্রনিক রোগ মোকাবিলার জন্য একটি নতুন ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, নারীপ্রধান পরিবারগুলো সমাজের সবচেয়ে নিচের স্তরে পড়ে রয়েছে, তাই তাঁদের বিশেষ সহায়তা প্রয়োজন। তৃতীয়ত, ঋণের বোঝা বাড়ছে, যা একটি বড় ধরনের সমস্যা হয়ে উঠছে। চতুর্থত, ক্রমবর্ধমান খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা। এটি এখনো ব্যাপক আকারে হয়নি, তবে ধীরে ধীরে বাড়ছে এবং যা উদ্বেগজনক। পঞ্চমত, স্যানিটেশন সংকট উত্তরণ করে এসডিজি অর্জনের জন্য আমাদের হাতে মাত্র পাঁচ বছর আছে; কিন্তু এখনো প্রায় ৩৬ শতাংশ মানুষ নন-স্যানিটারি টয়লেট ব্যবহার করছেন। ফলে নিরাপদ স্যানিটেশন নিশ্চিত করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কর্মসংস্থান নিয়ে হোসেন জিল্লুর রহমান আরও বলেন, আমাদের মধ্যে এখন কর্মসংস্থানের জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বেকারত্বের দুর্যোগের বাস্তবতার মধ্যে আমরা অবস্থান করছি। কর্মসংস্থান নিয়ে বড় ধরনের ভাবনা এবং জরুরি উদ্যোগ প্রয়োজন। এ বিষয়ে এখনই আমাদের আলোচনা এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button