তৈরি পোশাক শিল্পের প্রসারে ভারতের বড় পদক্ষেপ, তুলা আমদানির শুল্ক প্রত্যাহার


আগামী ১৯ আগস্ট থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তুলা আমদানিতে শুল্কমুক্তির ঘোষণা দিয়েছে ভারত সরকার। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এক সরকারি আদেশে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সরকার আশা করছে, এই সিদ্ধান্ত ভারতের তৈরি পোশাক শিল্পকে আন্তর্জাতিক বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে এবং মার্কিন শুল্কের ধাক্কা সামাল দিতে সাহায্য করবে।
দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে তুলা আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিল কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি (সিআইটিআই)-এর মতো শিল্প সংস্থাগুলো। তাদের এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই ভারত সরকার তুলা আমদানির ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। এই ছাড় কার্যকর হওয়ার আগে, তুলা আমদানির ওপর ১১ শতাংশ শুল্ক আরোপিত ছিল।
সাময়িক এ সিদ্ধান্তকে ভারতের পোশাকশিল্পের জন্য বড় ধরনের স্বস্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে। শিল্পখাতের সংগঠনগুলোর দীর্ঘদিনের দাবি মেনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। তাদের মতে, শুল্ক ছাড় দিলে এ খাত আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ভারতের তৈরি পোশাক খাত তাদের উৎপাদন খরচ কমাতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা।
উচ্চ শুল্কের কারণে তীব্র সংকটে পড়েছে দেশটির ভারতের পোশাক শিল্প। বর্তমানে দেশটির এই খাত যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ শুল্কের বোঝা সামলাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্কের মধ্যে রয়েছে আগে থেকেই আরোপিত ২৫ শতাংশ এবং চলতি মাসের শেষ দিকে কার্যকর হতে যাওয়া আরও ২৫ শতাংশ শাস্তিমূলক শুল্ক। রাশিয়ার তেল কেনার কারণে যুক্তরাষ্ট্র এই অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্র ২০ শতাংশ এবং চীনের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ শুল্ক আদায় করে। তুলনামূলকভাবে এই উচ্চ শুল্কের কারণে ভারতের পোশাক শিল্প প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছিল। এই পরিস্থিতি বিবেচনা করেই সরকার তুলা আমদানির ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শিল্পসংশ্লিষ্টরা আশা করছে, সেপ্টেম্বরের পরও তুলা আমদানিতে এই শুল্কমুক্তির মেয়াদ সরকার বাড়াবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত উচ্চ শুল্কের প্রভাব সামলাতে ভারতের পোশাক রপ্তানিকারকরা এরই মধ্যে উৎপাদন বিকল্প হিসেবে বিদেশে বিনিয়োগের কথা ভাবছেন বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানা গেছে।
ভারতের পোশাক খাত এমনিতেই শ্রমিক সংকট ও সীমিত উৎপাদন সক্ষমতার সমস্যায় ভুগছে। এমন পরিস্থিতিতে রপ্তানিকারকদের উৎপাদন বিদেশে সরিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা সরকারের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।
ভারত সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে টেক্সটাইল খাতের রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হঠাৎ ৫০ শতাংশে পৌঁছানো সেই পরিকল্পনাকে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে।
এ পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে এমন এক সময়, যখন বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং কোম্পানিগুলোর চীন নির্ভরতা কমানোর প্রবণতার কারণে অনেকেই ভারতের দিকে ঝুঁকছিল। এমনকি আমেরিকান পোশাক ক্রেতাদের জন্য একটি শক্তিশালী বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছিল ভারত।
ক্রাইম জোন ২৪