শিরোনাম

প্রতিকূলতা পেরিয়ে নাজমুল এখন বিসিএস ক্যাডার

প্রতিকূলতা পেরিয়ে নাজমুল এখন বিসিএস ক্যাডার

নাজমুলের বেড়ে ওঠা গাজীপুরের টঙ্গীতে মধ্যবিত্ত পরিবারে। বাবা ছিলেন রেজিস্টাড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, মা গৃহিণী। ছোট বোন আর তিনি—ছোট্ট পরিবার। শিক্ষক বাবার অনুপ্রেরণা ও কঠোর নজরদারিতে ছোটকাল থেকে পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলেন নাজমুল। প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত রোল ছিল ১। প্রিয় শিক্ষক আতাউরের উৎসাহ তাঁকে পড়াশোনার পথে দৃঢ় করে তোলে। বাবার সহকর্মীদের সন্তানদের ভালো ফল দেখে নিজের মধ্যেও ভালো করার তাগিদ জন্মাত। আর সবকিছুর পেছনে ছিলেন মা—অক্লান্ত পরিশ্রমী, ধৈর্যশীলা কখনো হাল না ছাড়া এক নারী।

হঠাৎ ভেঙে পড়া জীবনের ভিত

২০১০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। এসএসসি পরীক্ষার মাত্র কয়েক দিন বাকি, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা। হাসপাতালে নেওয়া হলেও তিনি আর ফেরেননি। বাবার মৃত্যুতে পরিবারে নেমে আসে গভীর শোক। এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আত্মীয়স্বজন, মামা-চাচাদের সহায়তায় ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষা দেন নাজমুল। পরীক্ষা শেষে টিউশনি শুরু করে পরিবারের হাল ধরেন। ফল প্রকাশের দিন প্রধান শিক্ষকের ফোনে জানতে পারেন, তিনি জিপিএ-৫ পেয়েছেন। খুশির চেয়ে কষ্টই মনে বেশি। কারণ বাবা তাঁর সাফল্য দেখে যেতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হয়ে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ অর্জন করেন।

ভর্তিযুদ্ধ ও বিশ্ববিদ্যালয়জীবন

এইচএসসির পর ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেন। তিতুমীর কলেজে চান্স পান। আবার ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ দিকে ঠিক করেন সরকারি চাকরি করবেন।

চাকরির পথে প্রথম ব্যর্থতা

প্রথম চাকরির পরীক্ষা ছিল ৪০তম বিসিএস। কিন্তু তিনি প্রিলিমিনারিই উত্তীর্ণ হতে পারেননি। তবুও হাল না ছেড়ে পরবর্তী বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নেন। এর মধ্যেই শুরু হয় করোনা মহামারি। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়, ফিরে আসেন বাড়িতে। আবার টিউশনি শুরু করেন। ৪১তম বিসিএসে প্রিলিমিনারি পাস করলেও লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিতে লাগে প্রচুর বই ও টাকার জোগান। পরিচিত বড় ভাইদের সহায়তায় পড়াশোনা চালিয়ে যান। লিখিত পরীক্ষা দেন, একই সঙ্গে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায়ও অংশ নেন।

ধার করা পোশাকে ভাইভা প্রাইমারির ভাইভার দিন নিজের শার্ট-প্যান্ট-জুতা না থাকায় ধার নিয়ে বোর্ডে হাজির হন। ফলাফলে উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তখন পরিবারের জন্য এটি বড় স্বস্তি। ৪১তম বিসিএসের ভাইভায় নন-ক্যাডার হিসেবে সুপারিশ পান। মা সাহস জোগান—‘ধৈর্য ধর, সামনে ভালো কিছু হবে।’ ব্যাংকের চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে অগ্রণী ব্যাংকে অফিসার (ক্যাশ) হিসেবে যোগ দেন। কিছুদিন পর প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ পেয়ে বদলি হয়ে যান বাগেরহাটের মহিষ প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে।

অবশেষে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য ৪৪তম বিসিএসের ভাইভা দেন নাজমুল। অপেক্ষার দিনগুলো ছিল অনিশ্চয়তায় ভরা। অবশেষে ৩০ জুন রাতে বন্ধু ফিরোজের মাধ্যমে জানতে পারেন—তিনি প্রাণিসম্পদ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

নাজমুলের যাত্রা সহজ ছিল না। আর্থিক সংকট, রোগ-শোক, কটাক্ষ, সমালোচনা, মানসিক বিষণ্নতা—সবকিছু সামলেও তিনি এগিয়ে গেছেন। তাঁর বিশ্বাস, বিসিএসে লিখিত পাস করা প্রতিটি প্রার্থীই ক্যাডার হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। ভাইভা অনেকটাই ভাগ্যের ব্যাপার। ধৈর্য ধরে চেষ্টা করলে সৃষ্টিকর্তা কাউকে নিরাশ করেন না।


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button