সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ‘জুডিশিয়াল কিলিংয়ের শিকার’, উকিল নোটিশ পাঠাচ্ছে তাঁর পরিবার


আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ‘জুডিশিয়াল কিলিং’ করা হয়েছে–এই অভিযোগ তুলে এর স্বপক্ষে প্রমাণ সংগ্রহে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উকিল নোটিশ পাঠাবে তাঁর পরিবার।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডির বাসায় পরিবারের সদস্যদের পক্ষে তাঁর ছোট ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।
হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, ‘চারজন ব্যক্তি বাংলাদেশে আসতে চাচ্ছিলেন। তাঁরা বাবার ডিফেন্স উইটনেস হিসেবে বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলেন। তবে ট্রাইব্যুনাল সেটাও নাকচ করে দেন। তাঁরা ছিলেন মুনীম আরজুমান খান, আমবার হারুন সাইগেল, ইশহাক খান খাগওয়ানি ও নিয়াজ আহমেদ নূর। এই চারজন ব্যক্তি পরে ইউটিউবের মাধ্যমে নিজেরা তাঁদের এভিডেন্স দিতে চেয়েছিলেন।’
ওই চার ব্যক্তি প্রসঙ্গে হুম্মাম বলেন, ‘এই ব্যক্তিরা প্রমাণ করতে পারতেন যে, আব্বা (সালাউদ্দিন কাদের) ১৯৭১ সালে পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি ছিলেন। এই নামগুলো বলার কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশ ফরেন মিনিস্ট্রি তাদের বিদেশি দূতাবাস যেগুলো আছে, সেখানে যখন কোনো বার্তা পাঠানো হয়, সেগুলোকে সাইফার বলা হয়। সেই সাইফার মেসেজগুলোতে বেশির ভাগ সময় কোডেড সিক্রেট থাকে। এটার একটি সাইফার মেসেজ আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে।
‘এতে বলা আছে, এই চারজনের নাম উল্লেখ করে বলা আছে যে, কোনোভাবে তাঁদের যেন ভিসা না দেওয়া হয়। এই সাইফার মেসেজের মাধ্যমে প্রমাণ হচ্ছে যে, আব্বার সঙ্গে একটা খুব বড় অন্যায় হয়েছে। আমার বাবাকে তারা কোনোভাবেই ফেয়ার জাস্টিসের ধারেকাছেও আনতে পারল না। আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে—এটা একটা জুডিশিয়াল মার্ডার ছিল। এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের রেজিমের সরকার সরাসরি জড়িত ছিল।’
হুম্মাম কাদের চৌধুরী আরও বলেন, ‘এগুলো আমরা মিডিয়া ট্রায়ালের জন্য করছি না। আমাদের কাছে অলরেডি যে এভিডেন্স আছে, এই এভিডেন্স নিয়েই কিন্তু আমরা সরাসরি হাইকোর্টে যেতে পারি। আমরা চাচ্ছি, এই সরকার (অন্তর্বর্তী সরকার) এবং বর্তমান জুডিশিয়ারিকে সন্মান দেখিয়ে তাদের সহযোগিতা নিয়ে আমরা বার কোর্টে যাব। আশা করি, আমরা প্রমাণ করতে পারব যে, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নির্দোষ ছিলেন এবং তাঁকে জুড়িশিয়াল মার্ডার করা হয়েছে।
‘আমরা ইতিমধ্যে আইনজীবীদের সঙ্গে আলাপ করেছি। আমরা রিটের মাধ্যমে কোর্টে যেতে পারব। আশা করছি, অন্তত আমরা যদি সরকারের সহযোগিতাটা পাই, এগুলো যদি ডি-ক্লাসিফাই হয়ে যায়, তাহলে ওই এভিডেন্স নিয়েই আমরা আদালতে যাব। আশা করছি, রোববারই আমরা আদালতে পিটিশন করব।’
হুম্মাম কাদের বলেন, ‘বাবাকে শেখ হাসিনা চাইলে হয়তো একটা গুলিতে হত্যা করতে পারতেন। সেটা না করে আব্বার যে রাজনীতিটা আছে, সেটাকে ধ্বংস করে দেওয়া ছিল তাঁর লক্ষ্য।’
সালাউদ্দিনের মামলা চলাকালে একটি ঘটনা উল্লেখ করে হুম্মাম কাদের বলেন, ‘সে সময় স্কাইপে ফাঁস হয়েছিল, যেখানে জাস্টিস নাজিম বলেছেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসি দিতে পারলে সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগে জায়গা খালি আছে, সেখানে আমাকে জায়গা দিয়ে দেবে।’
সংবাদ সম্মেলনে সালাউদ্দিনের স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী বলেন, ‘আমার কাছে এখনো ভিডিওগুলো আছে। আমি জানি না, কে একজন ভিডিওগুলো আমাদের কাছে পাঠিয়েছিল। যখন রাতের বেলা উনাকে নিয়ে যায়, তখন সারা রাত টর্চার করে পিজি হাসপাতালে নিয়ে যায়। পিজি হাসপাতালের একটা ভিডিও—উনাকে যখন বের করে আনছে, সেখানে দেখা গেছে, উনাকে মেরেছে, উনার এখানে-ওখানে রক্ত।’
সালাউদ্দিনের বড় ছেলে ফাইয়াজ কাদের চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যখন আব্বার জীবনটা বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন দূতাবাসে দৌড়াচ্ছিলাম, আব্বাকে বাঁচাতে আমরা যখন লড়াই করছিলাম, বিদেশিরা আমাদের এটা বলেছিল যে, ট্রাইব্যুনালটা করেছে একটা শো করার জন্য। কিন্তু সেটা তারা ওপেনলি আমাদের বলতে পারেনি। তাদের (বিদেশিদের) মুখে আমরা শুনেছিলাম যে, এই ট্রাইব্যুনাল করা হয়েছিল খুন করার জন্য। একটা জিনিস প্রমাণ করার জন্য যে, শেখ হাসিনা খুন করতে পারে।
‘এটাই কিন্তু আমার বাবাকে ফাঁসি দিয়ে, অন্যদের ফাঁসি দিয়ে একটা জিনিস তখনই তার (শেখ হাসিনার) যে ক্ষমতা, ভয়ভীতি দিয়ে সে সবাইকে চালাতে পারত, সেই জিনিসটা সে প্রমাণ করতে চেয়েছিল এবং সেটাই সে করতে পেরেছে গত ১৫ বছর ধরে। এখন দেশের ১৮ কোটি মানুষ সবাই জানে যে, শেখ হাসিনা খুন করতে পারে।’
সাক্ষীরা সাজানো ছিল বলেও অভিযোগ করেন হুম্মাম কাদের।
হুম্মাম কাদের বলেন, ‘যারা সাক্ষী দিয়েছে, তাদের সঙ্গে আমরা আলাপ করেছি। তারা বলেছে, তাদের অনেক দিন ট্রেনিং দেওয়া হয়েছিল। তারা বলেছে, আমাদের অনেক দিন টর্চার করা হয়েছে, চাপ দেওয়া হয়েছে।’
ক্রাইম জোন ২৪