ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণ সুদানে স্থানান্তরের পরিকল্পনা ইসরায়েলের, চলছে আলোচনা


ইসরায়েল গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের যুদ্ধবিধ্বস্ত পূর্ব আফ্রিকার দেশ দক্ষিণ সুদানে পুনর্বাসনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করছে। হামাসের বিরুদ্ধে টানা ২২ মাসের সামরিক অভিযানে গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ার পর অঞ্চলটিতে ব্যাপক অভিবাসন ত্বরান্বিত করার ইসরায়েলের বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এই আলোচনা চলছে।
এ বিষয়ে অবগত ছয়জন ব্যক্তি বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আলোচনা কত দূর এগিয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে, যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে থাকা এক অঞ্চল থেকে মানুষকে অন্য এক যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে স্থানান্তরিত করা হবে, যা মানবাধিকার নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলবে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চান, যেখানে গাজার বেশির ভাগ মানুষের পুনর্বাসনের কথা বলা হয়েছে। নেতানিয়াহু একে বলেন ‘স্বেচ্ছা অভিবাসন।’ ইসরায়েল অন্যান্য আফ্রিকান দেশগুলোর সঙ্গেও আলোচনার টেবিলে একই ধরনের প্রস্তাব তুলেছে।
গত মঙ্গলবার ইসরায়েলি টেলিভিশন চ্যানেল আই-২৪ কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমার জানা যুদ্ধ আইনের অধীনে সঠিক কাজ হলো, জনগণকে এলাকা ছাড়তে দেওয়া, তারপর সেখানে থাকা শত্রুর বিরুদ্ধে সর্বশক্তি প্রয়োগ করা।’ তবে তিনি এ সময় ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণ সুদানে স্থানান্তরের কথা উল্লেখ করেননি।
ফিলিস্তিনিরা, মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশির ভাগই এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, এটি আসলে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে জোরপূর্বক উচ্ছেদের একটি নীলনকশা।
এদিকে, দক্ষিণ সুদানের জন্য এ ধরনের একটি চুক্তি ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার সুযোগ এনে দিতে পারে। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী সামরিক শক্তি ইসরায়েল। একই সঙ্গে এটি ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিরও একটি সম্ভাব্য পথ হতে পারে দক্ষিণ সুদানের নেতাদের জন্য। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প গাজার জনগণকে পুনর্বাসনের ধারণা তুলেছিলেন, যদিও সাম্প্রতিক সময়ে তিনি এ বিষয়ে নীরব।
ইসরায়েলের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্যারন হাসকেলের কার্যালয় জানিয়েছে, তিনি প্রথমবারের মতো দক্ষিণ সুদানে সফরে যাচ্ছেন। তবে ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের প্রসঙ্গ তিনি তুলবেন না। অন্যদিকে দক্ষিণ সুদানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসন নিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে বলে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা ভিত্তিহীন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেছেন, তারা ব্যক্তিগত কূটনৈতিক আলোচনার বিষয়ে মন্তব্য করে না। দক্ষিণ সুদানের হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করা স্লাভিক জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে অবগত থাকলেও সরাসরি এতে জড়িত নয়।
এদিকে, দক্ষিণ সুদান সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে একটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দিয়েছে। সেই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা জো স্লাভিক বলেন, দক্ষিণ সুদান চায় ট্রাম্প প্রশাসন দেশটির ওপর থাকা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করুক এবং কিছু দক্ষিণ সুদানি অভিজাত ব্যক্তির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিক। দেশটি ইতিমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের গণ-নির্বাসন অভিযানে যুক্ত আটজনকে গ্রহণ করেছে, যা হয়তো সদিচ্ছা প্রদর্শনের অংশ।
অপরদিকে, ইসরায়েলের সঙ্গে কেন সুদান এই ধরনের চুক্তিতে রাজি হবে—এমন বিষয়ে দক্ষিণ সুদান নিয়ে বই লেখা সাংবাদিক পিটার মার্টেল বলেন, ‘আর্থিক সংকটে থাকা দক্ষিণ সুদানের যেকোনো মিত্র, অর্থনৈতিক সুবিধা এবং কূটনৈতিক নিরাপত্তা দরকার।’
মার্টেল তাঁর বই ফার্স্ট রেইজ আ ফ্ল্যাগে বলেছেন, ২০১১ সালে স্বাধীনতার আগে দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ সুদানের আরব-প্রধান সরকারের বিরুদ্ধে দক্ষিণ সুদানের বিদ্রোহীদের সহায়তা দিয়েছিল।
ক্রাইম জোন ২৪