স্বাধীন ফিলিস্তিনের ‘কফিনে শেষ পেরেক ঠুকতে’ পশ্চিম তীরে নয়া বসতির অনুমোদন ইসরায়েলের


ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মতরিচ গতকাল বুধবার রাতে ঘোষণা করেছেন, তিনি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড পশ্চিম তীরে নতুন ‘ই–ওয়ান’ বসতি নির্মাণ পরিকল্পনার অনুমোদন করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই পরিকল্পনা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণাকে কবর দেবে।’ ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াই-নেটের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে জেরুসালেম পোস্ট।
ওয়াই-নেটের খবরে বলা হয়েছে, স্মতরিচ আজ বৃহস্পতিবার একটি সংবাদ সম্মেলন করবেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে থাকবেন ইয়েশা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ইসরায়েল গান্তজ এবং মা’আলে আদুমিমের মেয়র গাই ইয়িফরাখ। ওই সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিতভাবে পরিকল্পনাটি উপস্থাপন করা হবে।
পরিকল্পনায় পশ্চিম তীরের মা’আলে আদুমিম এলাকায় ৩ হাজার ৪০১টি নতুন আবাসিক ইউনিট নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা পিস নাউ এর আগেও এ ধরনের পরিকল্পনাকে ‘দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের কফিনে শেষ পেরেক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। সংস্থাটির মতে, এই প্রকল্প কার্যকর হলে পশ্চিম তীর কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হবে। এতে রামাল্লাহ, পূর্ব জেরুজালেম ও বেথলেহেমের মধ্যবর্তী মহানগর অঞ্চলের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে।
স্মতরিচ প্রকাশ্যে এই ঘোষণা দিলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো এই পরিকল্পনার অনুমোদন নিশ্চিত করা হয়নি। ওয়াই-নেট উল্লেখ করেছে, পূর্বে এমন কিছু আবাসন প্রকল্পের ঘোষণা দেওয়া হলেও বছরের পর বছর তা বাস্তবায়নে দেরি হয়েছে।
তবে স্মতরিচ দাবি করেছেন, এবার প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। তিনি বলেন, ‘এটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণার কফিনে শেষ পেরেক।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে এই এলাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই এলাকা ছাড়া পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।’
ইসরায়েলি এই মন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকার গঠনের পর থেকেই এই পরিকল্পনার কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ই–ওয়ান এলাকায় নির্মাণ অনুমোদন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণাকে দুর্বল করবে এবং এটি আমাদের ডি-ফ্যাক্টো সার্বভৌমত্ব পরিকল্পনার অংশ। কয়েক দশকের আন্তর্জাতিক চাপ ও প্রকল্প স্থগিতের পর আমরা প্রচলিত ধারা ভেঙে মা’আলে আদুমিম ও জেরুজালেমের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করছি।’
পরিকল্পনাটি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত না হলেও বেনিয়ামিন ও মা’আলে আদুমিম এলাকায় এটি ব্যাপক উচ্ছ্বাসের জন্ম দিয়েছে। বেনিয়ামিন আঞ্চলিক কাউন্সিলের প্রধান গান্তজ একে ‘বসতি স্থাপন আন্দোলনের জন্য ঐতিহাসিক সাফল্য’ আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটি ভবিষ্যতে (পুরো ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ওপর ইসরায়েলি) সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।’
মা’আলে আদুমিমের মেয়র ইয়িফরাখও এই পরিকল্পনার প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা অবৈধ নির্মাণের মাধ্যমে এই এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে। কিন্তু নতুন এই পাড়া গড়ে ওঠার মাধ্যমে তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।’
এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নজর কেড়েছে। তারা মনে করছেন, এটি মধ্যপ্রাচ্যে দুই রাষ্ট্র সমাধান প্রক্রিয়ার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
ক্রাইম জোন ২৪